তিনটি গাছের আশা ও স্বপ্নের গল্প
খ্রিস্টীয় দর্পণ ডেষ্ক
অনেকদিন আগে একটা পাহাড়ে তিনটা গাছ ছিলো, তারা তাদের আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলো। প্রথম গাছটি বলল, আমি চাই আমাকে দিয়ে একটা গুপ্তধনের শিন্দুক বানানো হবে। তার ভিতরে সোনা রূপা আর দামি দামি পাথর দিয়ে ভরতি থাকবে। অনেক সুন্দর আর কঠিন খোদাই করে আমাকে তৈরি করা হবে। সবাই আমার সুন্দর্য্য দেখতে আসবে।
দ্বিতীয় গাছটি বলল, আমার স্বপ্ন হলো একদিন আমাকে দিয়ে একটি বিরাট জাহাজ বানানো হবে। আমি রাজা রানীদের নিয়ে বড় বড় সাগর পার হবো আর দুর-দুরান্তে বানিজ্য করতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমার মধ্যে সবাই নিশ্চিন্তে সাগর পাড়ি দিবে। কারন আমার হাল খুবই মজবুত হবে।
শেষে তৃতীয় গাছটি বলল, আমি এই বনের সবচেয়ে উচু আর বড় গাছ হতে চাই। সবাই আমাকে দেখতে আসবে আর আমার প্রচুর শাখা প্রশাখা হবে, আমাকে দেখে মনে হবে আমি আকাশে ঠেকে গেছি আর আমি ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকবো। আমি এই পাহাড়ের সবচাইতে উচুতে থাকবো আর সবাই আমাকে মনে রাখবে।
তারা বছরের পর বছর প্রার্থনা করতে লাগলো, যেন তাদের স্বপ্ন সত্যি হয়। একদিন কাঠুরীয়া এসে প্রথম গাছটিকে দেখলো আর বলল, এই গাছটা অনেক বড়, এটা কাঠ মিস্ত্রীর কাছে বিক্রি করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। তাই সে গাছটি কাটতে শুরু করলো। গাছটির মনে আনন্দ ছিলো, কারন সে ভাবছিলো, কাঠমিস্ত্রী তাকে দিয়ে একটা সুন্দর সিন্দুক বানাবে।
দ্বিতীয় গাছটির কাছে গিয়ে কাঠুরীয়া বলল, এটা খুবই মজবুত, আমি এই গাছটা জাহাজীদের কাছে বিক্রি করলে ভালো দাম পাবো। দ্বিতীয় গাছটাও খুব খুশি হলো, সে ভাবলো তাকে দিয়ে একটা বড় জাহাজ বানানো হবে।
এরপর কাঠুরীয়া যখন তৃতীয় গাছটার সামনে আসলো, তখন তৃতীয় গাছটি ভয় পেলো, কারণ তাকে কেটে ফেলা হলে তার স্বপ্ন পুরন হবে না। এই গাছটা আমার বিক্রি করার প্রয়োজন নেই। এটা আমি নিয়ে যাবো। এরপর কাঠুরীয়া গাছটা কেটে নিয়ে গেলো।
যখন প্রথম গাছটাকে কাঠমিস্ত্রীর কাছে নেয়া হলো, তাকে দিয়ে একটা বাক্স বানানো হলো, যেখানে পশুদের খাওয়ার জন্য খড়-কুটা রাখা হবে। এরপর তাকে একটা গোয়াল ঘরে রাখা হলো আর খড়-কুটা দিয়ে ভরতি করা হলো। কিন্তু গাছটা খুবই দুঃখ পেলো, কারন তার স্বপ্নপূরণ হলো না। দ্বিতীয় গাছটিকে কেটে একটা ছোট্ট নৌকা বানানো হলো। তার স্বপ্ন ছিলো বড় জাহাজ হয়ে রাজা-রানীদের নিয়ে সাগর পাড়ি দেয়া। কিন্তু তা পুরন হলো না। তৃতীয় গাছটাকে কেটে তার বড় বড় টুকরোগুলো ফেলে রাখা হলো, অনেক বছর কেটে গেল, গাছেরা তাদের স্বপ্নের কথা ভুলে গেলো।
তারপর একদিন, একজন পুরুষ ও একজন মহিলা সেই গোয়াল ঘরে এলেন। মহিলাটি একটা শিশুর জন্ম দিলেন এবং শিশুটিকে সেই পশুর খাবারের বাক্সটিতে রাখলেন যেটা প্রথম গাছটি কেটে বানানো হয়েছিলো। গাছটি এই শিশুর গুরুত্য অনুভব করলো আর বুঝতে পারলো পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি তার উপরে রাখা হয়েছে।
অনেক বছর পর কিছু লোক সেই ছোট্ট নৌকাটিতে উঠলেন, যেটা দ্বিতীয় গাছটি দিয়ে তৈরি হয়েছিল। তাদের একজন খুব ক্লান্ত ছিলেন, এবং নৌকাটিতে ঘুমিয়ে গেলেন। তারা যখন সাগরের মধ্যে গেলেন, তখন ঝড় শুরু হলো, আর গাছটি ভাবলো, সে এই ঝড় থেকে লোকগুলোকে রক্ষা করতে পারবে না। লোকেরা ঘুমন্ত লোকটিকে ডেকে তুললেন। সেই লোকটি উঠে দাড়ালেন আর বললেন, থামো। আর ঝড় থেমে গেলো। তখন গাছটি বুঝতে পারলো, সে সব রাজাদের চাইতে বড় রাজাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।
শেষে, তৃতীয় গাছটিকে একজন কাধে নিলো, আর শহরের মধ্যে দিয়ে সেটা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলো। সবাই তাকে বিদ্রুপ করছিলো আর যখন লোকটি তার গন্তব্যে পৌছালো, তখন তাকে সেই গাছের সঙ্গে পেড়েক মারা হলো আর পাহাড়ের চুড়ায় মৃত্যুর জন্য ঝুলিয়ে দেয়া হলো। আর তখন তৃতীয় গাছটা বুঝতে পারলো, তার যে স্বপ্ন ছিলো, পাহাড়ের উচুতে থাকা আর ঈশ্বরের কাছে যাওয়া, তা পূরণ হলো।
এই গল্পটির মূল বিষয় হলো এই, যখন দেখতে পান কোন বিষয় আপনার ইচ্ছায় চলছে না, তখন মনে রাখবেন, আপনাকে নিয়ে ঈশ্বরের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। আপনি যদি তার উপরে নির্ভরশীল থাকেন, তিনি আপনাকে সেই অমূল্য উপহার দিবেন। তিনটি গাছের স্বপ্নপূরণ হয়েছিলো। কিন্তু তারা যেভাবে চেয়েছেন, সেইভাবে নয়। আমরা জানিনা ঈশ্বর আমাদের জন্য পরিকল্পনা রেখেছেন! আমরা শুধু জানি আমরা যেভাবে ঈশ্বর অন্যভাবে তা দেন। কিন্তু তিনি যেভাবে দেন, সেটা সবচেয়ে উত্তম।