সাপে কাটা রোগীর অপচিকিৎসা নিয়ে কিছু কথা
ডা. জাকির হোসেন
শরীয়তপুরে সাপের কামড়ে এক গৃহবধূ নিহত এবং বহু মানুষ আহত হওয়ার একটি সংবাদ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আহত লোকজনকে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে একজন ওঁঝা চিকিৎসা করছেন। স্ন্যাক বাইট (ঝহধশবনরঃব) হচ্ছে একপ্রকার শারীরিক আঘাতগ্রস্থতা, যা সাপের কামড়ের বা দংশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সাপের বেশিরভাগ প্রজাতিই বিষাক্ত নয়। সারা পৃথিবীতে বেশ অল্প সংখ্যক প্রজাতির বিষধর সাপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে বাংলাদেশেও বেশ কটি বিষাক্ত প্রজাতি সাপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বসবাসরত বিষাক্ত প্রজাতির সাপগুলোর মধ্যে গোখরা অন্যতম। বিষাক্ত প্রজাতির সাপ সাধারণত বন-জঙ্গলের গর্তে বাস করলেও বর্ষার সময় তাদের স্বাভাবিক আবাস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা লোকালয়ে চলে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যায় দেশের আনাচে-কানাচে পানি জমেছে। বন্যা কবলিত এলাকার অনেকের বসতবাড়ি কিংবা বসতবাড়ির উঠানেও পানি চলে এসেছে।
বন্যায় বিষধর সাপের স্বাভাবিক আবাসস্থল বিনষ্ট হওয়ার ফলে দেশজুড়ে নানারকম বিষধর সাপের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। যার ফলে হঠাৎ করেই দেশজুড়ে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছেÑ চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই উন্নতির যুগেও সাপে কাটা রোগীরা অপচিকিৎসার স্বীকার হচ্ছেন, যার ফলে বাড়ছে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ। দেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা আছে। স্বাভাবিকভাবেই আক্রান্ত রোগীকে আত্বীয়-স্বজনরা ওঁঝা ও কবিরাজের দ্বারস্থ হয়। এই ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় প্রচারণা জরুরি। সাপে কাটা রোগীকে শুরুতেই আশ্বস্ত করতে হবে তার কোনো বিপদ হবে না। তাকে বোঝাতে হবে, সব সাপ বিষধর নয়, এমনকি বিষধর সাপে কামড়ালেও ভীত হওয়া যাবে না। রোগী বেশি ভয় পেলে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়ে বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। রোগীকে নিয়ে হুড়োহুড়ি না করে কামড়ের ওপর দিকে একটি ফিতা বা রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলুন, এরপর যত দ্রত সম্ভব একটি টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তর করুন।
সাধারণত চিকিৎসকেরা রোগীকে দেখেই বলতে পারেন, সাপটি বিষাক্ত ছিল কি না? যদি বিষাক্ত সাপ হয় চিকিৎসক যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে চিকিৎসা শুরু করেন, এন্টি ভ্যানোম (অহঃর াবহড়স) ইনজেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাই সাপে কাটা রোগীকে অপচিকিৎসার নামে ঝাড় ফুঁক করাবেন না। কামড়ের স্থান সাবান দিয়ে ধোবেন না। আক্রান্ত স্থানের আশপাশে কেটে রক্ত বের করবেন না। ইলেকট্রিক শক দিবেন না। ঠা-া পানি বা বরফ কামড়ের স্থানে ধরবেন না। সর্বোপরি অযথা কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। স্বাস্থ্য অধিদফতর বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে সাপের কামড় এখনো একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখে থাকে। কিন্তু সে ব্যাপারে প্রশাসনের সার্বিক প্রচারণার উদ্যোগ একেবারেই চোখে পড়ে না। অপচিকিৎসার হাত থেকে সাপে কাটা রোগীর জীবন বাঁচাতে সর্বাগ্রে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান