সাজা মওকুফে রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহার করুন
ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন
চলতি বছরে দেশের সব কারাগার থেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা মওকুফের জন্য ২৯৭ বন্দীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে। সরকারের মুক্তি দেওয়ার চূড়ান্ত তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী, দুর্ধর্ষ ডাকাত ও অ্যাসিড নিক্ষেপের মামলার আসামিসহ ৫৩ জনের নাম রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ যাদের মুক্তি দেওয়ার তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় সাজা মওকুফ করা হচ্ছে। কেননা আমরা দেখলাম, এসব অপরাধীদের সাজা মওকুফের জন্য মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সুপারিশ রয়েছে। আমরা দেখেছি এর আগেও সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় হত্যা মামলার আসামিকে মুক্তি দিয়েছে। বিধান আছে, আসামিদের ক্ষেত্রে যারা দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন তাদের সরকার বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে মুক্তি দিতে পারে। তবে যাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা বা জঘন্যতম কার্যকলাপেরর জন্য সাজাপ্রাপ্ত যারা, সেসব আসামি যদি নিজের আচরণের পরিবর্তন করতে বা সংশোধিত হতে না পারেন, তাহলে তো সে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। মুক্তি দেওয়ার জন্য যাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে, কাউকে যদি রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে সমাজ খুব একটা উপকৃত হবে না। কেননা অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা মুক্তি পেয়েছে, তারা সংশোধন হয়েছে এ রকম ধারণা পাওয়া যায় না।
বর্তমান সরকার আগেও এ রকম বিতর্কিত লোকদের মুক্তি দিয়েছিল। যাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা ছিল, সেসব আসামিদেরও মুক্তি দিয়েছে। এভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ হত্যা মামলার আসামিদের মুক্তি দেওয়ার মানে হলো দেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত। যে আসামিদের বিরুদ্ধে ঘোরতর কোনো অপরাধ নেই, কেবল তাদেরকেই সাজা মওকুফের সুপারিশ করলে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। কেননা, দাগী অপরাধীদের ছেড়ে দিলে তারা আবার অপরাধে জড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। এমনকি তাদের মাঝে অপরাধে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন তাদের মাঝে এক ধরনের প্রতিহিংসা কাজ করে এবং অপরাধে লিপ্ত হয়। তাই সাজা মওকুফের তালিকা তৈরির সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কারা অধিদফতরকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর তা না হলে সাজা মওকুফ বা মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়াটা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। বিশেষ করে সমাজে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
পরিচিতি: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ