অন্যান্য দেশের সঙ্গে মার্কিন বন্দুক সংস্কৃতির পার্থক্য
সিএনএন বিশ্লেষণ
রাশিদ রিয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে পুলিশকে সাহায্য চেয়ে টেলিফোন করার পর এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতেই নিহত হন। তার মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলীয় নাগরিক জাস্টিন রাসজেকের নিহত হবার ঘটনাও যুক্তরাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে ফের তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করছে। দেশটিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ৯ লাখ কর্মকর্তা অস্ত্র ব্যবহার করছেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পুলিশ কর্মকর্তা অস্ত্র ব্যবহার করেন।
তবে ১৯টি দেশের পুলিশ কর্মকর্তা এখনো অস্ত্র ব্যবহার করেন না। এছাড়া ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নরওয়ের অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা অস্ত্র ব্যবহার করেন না। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর তিন চতুর্থাংশ তাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে বন্দুক দেয় না। দেখা গেছে যেসব দেশের পুলিশ কর্মকর্তা অস্ত্র ব্যবহার করেন না তাদের চেয়ে অস্ত্র ব্যবহার করেন এমন দেশের পুলিশ কর্মকর্তারা সহিংসতার শিকার হন বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৫ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় ৪১ পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশের হাতে মানুষের নিহত হবার ঘটনাও ‘ন্যায়পরায়ণ হত্যাকা- বলেই এফবিআই’এর অপরাধ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৪শ মানুষ পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে এ সংখ্যা আরো বেশি। ওয়াশিংটন পোস্টের হিসেবে এ বছরেই এ পর্যন্ত ৫৪৭ জন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রের অভূতপূর্ব ব্যবহার, মালিকানা, মানসিকতা ও বন্দুক সংস্কৃতি অন্য দেশে আড়ম্বরপূর্ণ হিসেবেই দেখা হয়। ভারতে বেসামরিক মানুষের কাছে ৪৬ মিলিয়ন অস্ত্র রয়েছে। অস্ত্র সংখ্যার সর্বশেষ হিসেবও যা এক দশকের পুরনো, সে হিসেবে বিশ্বে বেসামরিক মানুষের কাছে অস্ত্রের সংখ্যা ৬৫০ মিলিয়ন। সুইজারল্যান্ডের স্মল আর্মস সার্ভে বলছে ২০০৭ সালের পর থেকে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্ত্রের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আদতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য না থাকায় বেসামরিক মানুষের কাছে ঠিক কি পরিমাণ অস্ত্র আছে তা বলা যাচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘর্ষ ও অস্ত্রের চোরাচালান তা আরো কঠিন করে তুলছে।
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা সর্বাধিক অস্ত্র ব্যবহার করেন। পিউ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের অস্ত্র রয়েছে। ৪৮ ভাগ বলছেন, শৈশব থেকেই তারা বাড়িতে অস্ত্রের ব্যবহার দেখছেন। যাদের অস্ত্র রয়েছে তাদের ৬৬ ভাগ বলছেন একাধিক অস্ত্রের মালিকানার কথা। অস্ত্র ছাড়া জীবন তারা কল্পনাও করতে পারেন না এমন মন্তব্য করেছেন অনেকে।
আড়াই বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে যে ইয়েমেনে, সেখানে রয়েছে মাথাপিছু দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দুকের মালিকানা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বলছে, অস্ত্রের ব্যবহারে মৃত্যুর সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রেই সর্বোচ্চ। অস্ত্র ব্যবহারে ব্রিটেনের চেয়ে ৫১ ভাগ বেশি মানুষ নিহত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। পরিসংখ্যান বলছে বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩শ শিশু বন্দুকের গুলিতে মারা যায়। দেশটির অধিকাংশ বন্দুকের মালিক বলেন, নিজেকে রক্ষার জন্যেই তিনি অস্ত্র রাখেন। উন্নত আয়ের যে কোনো দেশের চেয়ে বন্দুকের ব্যবহারে আত্মহত্যার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ৮ গুণ বেশি। এলসালভেদরে বন্দুক সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি মানুষ ইদানিং মারা যাচ্ছে। দেশটিতে ১ লাখ মানুষের মধ্যে বন্দুক সহিংসতায় ৯০ জন মানুষ মারা যায়। ২০১০-১৫ সালে হন্ডুরাসে বন্দুক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা প্রতি লাখে ৬৭ জনে পৌঁছে। কিন্তু বন্দুক নিয়ে গণহত্যার কথা আসলে যে কোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র এদিক থেকে এগিয়ে।
গত বছর অরলান্ডোতে বন্দুক দিয়ে ৪৯, ২০১২ সালে নিউটাউনে ২৬ ও ২০০৭ সালে ভার্জিনিয়ায় এমন সহিংসতায় ৩২ জন মারা যায়। এসব সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের মালিকানায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু একই সঙ্গে বন্দুকের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মানসিক অসুস্থ এমন ব্যক্তির কাছে অস্ত্র রাখার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। অস্ত্রের মালিকানা সীমিত করতে এর আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পদক্ষেপ নিলেও কংগ্রেসের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
১৯৮৭ ও ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৪টি বড় ধরনের বন্দুক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এরপর অস্ত্রের মালিকানায় কঠোর বিধি আরোপের পর এধরনের সহিংসতা এখনো ঘটেনি।