খসড়ায় সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব খর্ব করা হয়েছে
এস এম নূর মোহাম্মদ : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধির খসড়ায় সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব খর্ব করা হয়েছে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। যার কারণে আপিল বিভাগ তা গ্রহণ করেনি। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই খসড়া তুলে দেন। গতকাল আপিল বিভাগে শুনানির সময় ওই খসড়ার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।
একটি সূত্র জানায়, খসড়া বিধিমালার বিধি-১ এর উপবিধি (২)-এ বলা হয়েছে সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত তারিখ হতে এই বিধিমালা কার্যকর হবে। অথচ সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী গেজেট জারি এবং কার্যকরের কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু খসড়ায় বিষয়টি না থাকায় সুপ্রিম কোর্ট তাতে অসন্তোষ জানিয়েছে।
খসড়া বিধিমালার বিধি-১ এর (জ) ধারায় বিচার বিভাগের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলতে রাষ্ট্রপতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু খসড়া বিধিমালার (ছ) ধারায় স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কারো কথা উল্লেখ করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে এখানে আইন মন্ত্রণালয়কে বোঝানো হয়েছে। অথচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় ‘সুপ্রিম কোর্ট’-কে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছিল।
খসড়া বিধিমালার বিধি-১ এর (ঙ) ধারায় বলা হয়েছে সার্ভিসের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে বিধি ৩(১)-এ উল্লিখিত কোনো কারণে আনীত অভিযোগ বা প্রাপ্ত তথ্য, যার ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু বা বিভাগীয় মামলা রুজু হইতে পারে। অথচ সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। অপর দিকে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়ে করার কথা বলা আছে।
বর্তমানে বিচার বিভাগীয় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে প্রথমে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়। অভিযোগের গুরুত্ব অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট প্রাথমিক তদন্তের ব্যবস্থা করে। আর প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থাসহ বিভাগীয় মামলা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয় তদন্ত করে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু খসড়ায় এ বিষয়টি প্রতিফলিত হয়নি।
এছাড়া খসড়া বিধিমালার বিধি-১ এর চ (৩) ধারায় বলা হয়েছেÑ অসদাচরণ বলতে স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আইনসংগত আদেশ বা নির্দেশ পালন না করা বা উহা অমান্য করা বা তদানুসারে কর্তব্য সম্পাদনে অবহেলা করা। অথচ সংবিধানের ১১৬ (ক)-এ বলা আছে বিচার বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী