আইনমন্ত্রী পুরোপুরি ইউটার্ন করেছেন : প্রধান বিচারপতি
এস এম নূর মোহাম্মদ : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার যে খসড়া চূড়ান্ত করে সরকার সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছে, তা গ্রহণ করেনি আপিল বিভাগ। ওই খসড়ার কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আদালত যেসব সুপারিশ করেছিল, খসড়ায় এসেছে তার উল্টোটা। খসড়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে আমি যে বিষয়গুলো রাখার কথা বলেছিলাম, এই খসড়ায় তার কিছুই নেই। এর মানে তিনি পুরোপুরি ইউটার্ন করেছেন।
গতকাল রোববার মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানিতে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আমরা চাই সুন্দর একটা আইন হোক। তাই আসুন আমরা বসি। আমি এবং আপিল বিভাগের আমরা সব বিচারক, আপনি, মাননীয় আইনমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয় চাইলে তাদের পক্ষ থেকে এক্সপার্ট যে কয়জন ইচ্ছা সেই মিটিংয়ে রাখতে পারবে। আজ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যেকোনো দিন দুপুর ২টার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাদের বসতে সমস্যা নেই।
এরপর আদালত এই সংক্রান্ত শুনানি আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করেন।
শুনানির শুরুতেই আইনমন্ত্রীর দেওয়া খসড়ায় ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ শব্দ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এখানে বলা হল ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’। এটার মানে কী? সব আইনে ব্যাখ্যা থাকে। কিন্তু এখানে কোনো ব্যাখ্যা নেই। কর্তৃপক্ষ বলতে বিচার বিভাগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে রাখলেন। তবে তো আইন মন্ত্রণালয়ই থাকছে। এর সমাধান না হলে চলবে না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, খসড়ায় বলা আছে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ থেকে গেজেট কার্যকর হবে। অথচ মাসদার হোসেন মামলায় নির্দেশনা আছে, সুপ্রিম কোর্ট যে তারিখ থেকে কার্যকরের পরামর্শ দেবেন, সেই তারিখ থেকে কার্যকর হবে। রায়ের ষোলো বছরে হয়নি। আর এভাবে হলে ষোলোশ বছরেও গেজেট হবে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। তাহলে হাইকোর্টের কী থাকল? সবই তো মন্ত্রণালয়ের। ১৮৬১ সালে কলকাতা হাই কোর্ট হয়েছে, তখন থেকে হাইকোর্টের বিচারকরা নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন। এ ব্যবস্থাই চলে আসছে। হাইকোর্ট কেন রাখবেন? হাইকোর্ট উঠিয়ে দিন।
আপিল বিভাগ বলেন, আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম আইনমন্ত্রী এসেছেন। খসড়া দিয়ে গেছেন। কিন্তু এ কী রকম হলো? এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি বিদেশে যাওয়ার সময় মন্ত্রণালয় জিও দেয়। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি তাহলে অ্যাভয়েড করছেন? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী