ছাত্রী ধর্ষণ ও কারাগারের পলেস্তারা
মোহাম্মদ আবু নোমান
ঘটনা, বগুড়ায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের ছাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর ওই ছাত্রী ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে। রক্ত-মাংসের কোনো মানুষ কি পৃথিবীতে আছেন যে এমন ঘটনার কথা শুনেও স্থির থাকতে পারে? পারে না। এ লেখকও লিখতে গিয়েও প্রথমে প্রচ- আক্রোশে রক্ত টগবগ করে ওঠে, পরে খুব চট জলদি চুপসে যায় সীমাহীন সীমাবদ্ধতা ও অসহায়ত্ব উপলব্ধি করে। যেন মেনে নিতে হবে- এসব ঘটনা ঘটতেই থাকবে, আমরা সহ্য করেই যাব! প্রথমে ধর্ষণ তারপর হুমকি। শুধু হুমকিই নয়, ধর্ষিতাকে ন্যাড়া করার পর তা মাকেও ন্যাড়া করেছে দুর্বৃত্ত। ধর্ষিতার মাকে ন্যাড়া করে ওরা কি বোঝাতে চেয়েছে? বোঝাতে চেয়েছে, আমরা রাজনৈতিক ব্যবস্থার সন্তান! অন্যায়, অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন, তথাকথিত বড় ভাইয়েরা তা থেকে বাঁচাবে। তারা জানে তাদের বিচার হবে না। তাই তারা ধর্ষিতার মাকে কেন, প্রয়োজনে এদেশকেও ন্যাড়া করতে পারবে! পার্শ্ববর্তী দেশের একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর বিচার হয়, কিন্তু বাংলাদেশে একজন ক্ষমতাসীন শ্রমিক নেতার বিচার হবে কি? এ সংশয় এ কারণে যে, ইতোপূর্বে আমরা স্বঘোষিত মানিকের সেঞ্চুরির কথাও ভুলিনি। অপকর্ম যাদের পেশা, অপকর্ম করতেই এরা রাজনীতিকে বেছে নেয়। এর প্রধান কারণ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের আস্কারা। সব নেতা নিশ্চয়ই দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, তবে যারাই অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত তাদের আস্কারা এসব ঘটনা ঘটতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ধর্ষক তুফান সরকার ও তার সহযোগিরা সরকারি দলের আবর্জনা। এক বস্তা আলুর মধ্যে যদি ২/৪টা আলু পচে যায়, জ্ঞানীদের উচিত পুরো আলুর বস্তা পঁচার আগে ওই ২/৪টি আলুকে ফেলে দেওয়া। ক্ষমতাবানদের বুঝতে হবে দল ক্ষমতায় না থাকলে এরাও দলে থাকবে না। তাই আওয়ামী লীগকে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে দলকে ভবিষ্যতে এর জন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে।
সম্প্রতি আরেকটি খবরÑ বছর যেতে না যেতেই খসে পড়তে শুরু করেছে কেরানীগঞ্জের অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নতুন ভবনের পলেস্তারা। প্রায় ২শ একর জমিতে এই স্থাপনা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪০৬ কোটি টাকা। জানা যায়, বর্তমানে একটু বৃষ্টি হলেই ভবনের ভেতরের দেয়াল ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে ওঠে। কয়েকটি ভবনের দরজা-জানালা বেঁকে গেছে। নিরাপত্তার জন্য কারাগার চত্বরে স্থাপিত ৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ছে। আবার ভেঙে পড়া খুঁটিগুলো বদলে যেসব খুঁটি বসানো হয়েছে, সেগুলোও নিম্নমানের। উদ্বিগ্ন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেছেন, ‘ভবনগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে দেখা গেছে নির্মাণকাজ খুবই নিম্নমানের। অবকাঠামোগত ত্রুটি বন্দিদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে’। কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ায় সেখানে নতুন করে সিমেন্টের আস্তর দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা বন্দিদের বসবাসের ৩টি ভবন ও কারারক্ষীদের ১টি ব্যারাকেরও। ইতোমধ্যে ৫টি ভবনের খসে পড়া পলেস্তারা এবং মূল দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের জায়গায় আস্তর দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলেই ভবনের দেয়াল ভেতর থেকে ভিজে ওঠে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনে ঢোকার ৩টি লোহার গেট ভেঙে যাওয়ায় সেগুলো গণপূর্ত অধিদফতর মেরামত করে দিয়েছে। এছাড়াও নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় বন্দিদের দুটি ভবন এখনো বুঝে নেওয়া হয়নি। বন্দিদের ভবনের জানালা-দরজা ঠিকমতো লাগানো যায় না। বন্দিদের সাক্ষাৎকার ঘর অপ্রশস্ত হওয়ায় সেখানে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি কথা বললে তা ঠিকমতো শোনা যায় না। কারা অধিদফতর প্রথমে ৭২ ধরনের এবং পরে ৩৬ ধরনের ত্রুটি ও সমস্যা চিহ্নিত করে। নিম্নমানের নির্মাণকাজের অভিযোগ ওঠায় স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদফতর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল কুমারকে প্রকল্প থেকে সরিয়ে নেয়।
‘উন্নয়নের মহা সড়কে দেশ’ বলে বলে গলা ফাঁটিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। এভাবে সবকিছুই খসে, ধসে, ধর্ষণ ও ন্যাড়া করার পর ভয় হয়, কখন না জানি রানা প্লাজার মতো বড় ধরনের প্রাণহানি হয়ে ওঠে। যে উন্নয়ন এমনভাবে ন্যাড়ার পর ধসে ও খসে পড়ে তার কি দরকার?
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সম্পাদনা: আশিক রহমান