পাকিস্তান, ঘটনা ও উত্থাপিত প্রশ্ন
কাকন রেজা
পাকিস্তানের ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে ‘আপাত’ সরে গেলেন নওয়াজ শরিফ। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দুর্নীতি বিষয়ে নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। ‘আপাত’ বলার অর্থ হলোÑ নওয়াজের দল এখনো ক্ষমতায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এটা হলো বর্তমানের দৃশ্যমান সত্য। তবুও অদৃশ্যে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়, বিবিসি বাংলা ভিন্নমতের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে এনেছে তাদের সংবাদে। একটি হলোÑ সুপ্রিম কোর্টের মামলা নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে। দুর্নীতির মামলা হয় ফৌজদারি আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট মূলত একটি আপিল আদালত, এখানে মামলা হওয়ার কথা নয়। প্রথমে অস্বীকৃতি জানিয়েও সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি নিয়েছে। শুধু নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, নিজ আওতায় সেনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টির তদন্ত করেছে। ভিন্নমতটা এখানেই, যা দ্বিতীয় প্রশ্ন, তথা সেনাবাহিনীর পরোক্ষ হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে এনেছে; যেহেতু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করাটা বর্তমানে দুরূহ। তারপরও বেশিরভাগই দৃশ্যমান সত্যটির পক্ষেই বলছেন। তাদের কথা, প্রত্যক্ষ পরোক্ষ এসব সবই হিসাব-নিকাশের ব্যাপার, কল্পবাস্তব। দৃশ্যমান সত্যটি হলোÑ পাকিস্তানে আইনের শাসন বিজয়ী হয়েছে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নিয়ে আমাদের এখানেও কম কথা হচ্ছে না। বিশেষ করে একপক্ষ পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার প্রশংসা করছেন, বলেছেন আমাদের বিচারব্যবস্থার কথাও। ভূয়সী সে প্রশংসায় অনেকে পাকিস্তানের বিপর্যস্ত গণতন্ত্রের উদাহরণ দিতে গিয়ে বিচারবিভাগকে সামনে এনে বলছেন, ‘কেউ তো আছে, মানুষের আকুলতা বোঝার জন্য’ এমন কথা।
এসবের মাঝে উঠে এসেছে ২০১৬-এর অক্টোবরে পাকিস্তানি সাংবাদিক সিরিল আলমেইদার বিষয়টিও। ‘ডন’ পত্রিকায় পাকিস্তান সরকারের শীর্ষ পর্যায় ও সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব বিষয়ে প্রকাশিত একটি খবরের কারণে আলমেইদার উপর নাখোশ হয় পাকিস্তান সরকার। আলমেইদার বিদেশ যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তারা। কিন্তু গণতন্ত্র এবং সন্ত্রাস বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ পাকিস্তানেও প্রতিবাদের মুখে আলমেইদার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং পরবর্তীতেও তাকে কোনো চাপের সম্মুখীন হতে হয়েছে এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সে সময়েও আমাদের দেশের অনেকে আশ্চর্য হয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানেও এটা সম্ভব!’ বর্তমানেও নওয়াজ শরিফ বিষয়ে পাকিস্তানের গণমাধ্যম লিখছে, বাধাহীনভাবেই। মামলা চলাকালেও নওয়াজের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রুদ্ধ ছিল না। পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা রয়েছে তাতে অবশ্য আইনের শাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো দুটি বিষয় যায় না। কিন্তু যায় না তো অনেক কিছুই। রাশিয়ার পরম মিত্র ভারত আমেরিকার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে, রাশিয়া যাবে পাকিস্তানের সঙ্গে, এ দুটিও তো যায় না, কিন্তু যাচ্ছে তো।
পুনশ্চ: পাকিস্তান বিষয়ে উপরের কথকতায় নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই, রয়েছে শুধুই ঘটিত ঘটনা ও উত্থিত প্রশ্ন। ঘটনা ও প্রশ্ন যোগে নিজস্ব চিন্তা ও মত সাজিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠকের।
ফুটনোট: ২৯ জুলাই একজন বিচারপতির সম্মাননা অনুষ্ঠানে দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের শিরোনাম অনুযায়ী আমাদের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘বিচারবিভাগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকাই মঙ্গল।’
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান