বিজ্ঞাপনে দেশীয় মডেলরা কেন উপেক্ষিত?
ইকতেদার আহমেদ
বর্তমানে যেকোনো ধরনের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে বিজ্ঞাপনের ভূমিকা অপরিসীম। পণ্যের প্রস্তুতকারকরা কোন মাধ্যমে কি ধরনের বিজ্ঞাপন ভোক্তা বা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে সে বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বিজ্ঞাপন প্রস্তুত ও প্রচারে উদ্যোগী হয়। পণ্যের প্রস্তুতকারকের আর্থিক সামর্থ্যরে উপর নির্ভর করে বিজ্ঞাপনটি সকল ধরনের গণমাধ্যমে নাকি একটি বিশেষ ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার করা হবে। আমাদের দেশে রেডিও ও টেলিভিশন আবির্ভাবের আগে গণমাধ্যম হিসেবে খবরের কাগজের একক অবস্থান ছিল। রেডিও ট্রানজিস্টারে রূপান্তরিত হলে এটি অনেক সহজলভ্য হয়ে যায়। টেলিভিশনের আগমন সাদাকালোর মধ্যদিয়ে ঘটলেও সাম্প্রতিককালে টেলিভিশনের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার নাগালে চলে এসেছে।
খবরের কাগজ, রেডিও বা ট্রানজিস্টার এবং টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রথমোক্তটি স্থিরচিত্র বিশিষ্ট হলেও এর মধ্যে পণ্যের গুণাগুণ সংক্রান্ত বক্তব্য থাকে। অপরদিকে দ্বিতীয়টির মাধ্যমে শুধুমাত্র পণ্যের গুণাগুণ সংক্রান্ত বক্তব্য শোনা যায়। আর তৃতীয়টির মাধ্যমে যুগপৎভাবে একদিকে যেমন পণ্যের গুনাগুণ সংক্রান্ত বক্তব্য শোনা যায়, অপরদিকে মডেলের উপস্থিতিতে পণ্যের চলমান চিত্র উপভোগ করা যায়। প্রথম ও তৃতীয় মাধ্যমের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতারা মডেলের জনপ্রিয়তার বিষয়টিকে সবশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। দ্বিতীয় মাধ্যমটির ক্ষেত্রে মডেলের কোনো গুরুত্ব না থাকলেও বিজ্ঞাপনের বাক্য ও বক্তব্য শ্রুতিমধুর হলে তা শ্রোতাদের আকৃষ্ট করায় সহায়ক হয়। আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন নীতিমালা না থাকার কারণে দেখা যায় প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুতকারক বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ খবরের কাগজে ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচারে মডেল হিসেবে ভারতের বলিউডের নায়ক-নায়িকাদেরকে বিবেচনায় নেন। এ সকল বহুজাতিক কোম্পানি বিজ্ঞাপনের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আমাদের দেশীয় কোম্পানিসমূহের এ খাতে ব্যয় তাদের ধারে কাছেও নয়। আমাদের দেশের দুয়েকটি কোম্পানির কাগুজে ও টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে দেখা যায় দেশীয় মডেলের পরিবর্তে ভারতের কলকাতার মডেলদের দিয়ে এককভাবে বা আমাদের মডেলদের সঙ্গে যৌথভাবে বিজ্ঞাপন প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, লিভার ব্রাদার্স এর ন্যায় বহুজাতিক কোম্পানি তাদের টয়লেট সোপ লাক্সের একটি একক বিজ্ঞাপনে বলিউডের একজন নায়িকা অথবা নায়ক-নায়িকার যুগল বিজ্ঞাপনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আমাদের দেশের মডেলদের সমন্বয়ে প্রস্তুত সব বিজ্ঞাপনে এর সিঁকি ভাগ অর্থও ব্যয় হয় না। আমাদের দেশীয় মডেলদের মধ্যে নারী-পুরুষ নির্বিভেদে অনেকেই বেশ দক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন ও আকর্ষণীয়। এ সকল মডেলের উপস্থিতিতে বহুজাতিক ও বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন চিত্র প্রস্তুত করলে তার আবেদন কোনো অংশে বিদেশি মডেলের উপস্থিতিতে প্রস্তুত বিজ্ঞাপনের চেয়ে কম হবে না।
আমরা যেমন আমাদের খবরের কাগজ এবং টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে বহুজাতিক অথবা দেশীয় কোম্পানি নির্বিভেদে ভারতীয় মডেলদের অংশ্রগহণের সুযোগ দিচ্ছি বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে আমাদের মডেলরাও ভারতে অনুরূপ সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভারতীয় পণ্য বাজারজাত করে এমন বহুজাতিক কোম্পানি অথবা ভারতের স্থানীয় কোনো কোম্পানি কখনো তাদের বিজ্ঞাপনে আমাদের দেশের মডেলদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের আগ্রহ দেখায় না। আমাদের দেশে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানির জন্য দেশীয় মডেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে তা এ পেশা সংশ্লিষ্ট শিল্পীদেরসহ সামগ্রিকভাবে আমাদের বিজ্ঞাপন শিল্পকে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখবে। আর তাই আমাদের বিজ্ঞাপন শিল্পে যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার দেশীয় মডেলদের অংশগ্রহণে হওয়াই বোধ করি সমীচীন।
লেখক: সাবেক জজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান