খুনীদের চাপে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার খবরটি প্রকাশ করেনি কেউ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দেশি বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টি কৌশলে প্রকাশ করা হলেও কোথাও পরিবারের সদস্যদের হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়নি। বেশিরভাগ গণমাধ্যমেই ঘটনাকে সেনা অভ্যুত্থান এবং নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ বলে খবর প্রকাশ করে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টিকে অভ্যুত্থান হিসেবে বিশ্বে তুলে ধরার জন্যই স্বপরিবারে হত্যার খবরটি প্রকাশ করা হয়নি। তিনি বলেন, শিশু রাসেলসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে গিয়ে খুনীরা যে নির্মমতা পরিচয় দিয়েছে, তা প্রকাশ হলে বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও ঘৃণা জন্মাবে তা ফলাফল ভালো হবে না বুঝেই খুনীরা বিষয়টি প্রকাশ করেনি।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, সেদিন পত্রিকাগুলোতে খবর ছিলো,‘ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান।’ বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা ১৬ আগস্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ছাপা হয়। শাহরিয়র কবীর বলেন, আমরা কাজ করতে গিয়ে জেনেছি, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার খবর চেপে রাখার জন্য গণমাধ্যমকে চাপে রাখা হয়। যেনো দেশে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্ট না হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, বেশিরভাগ পত্রিকার খবর ছিলো, বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে এবং মুজিব নিহত হয়েছেন। সেই সময়ের সংবাদপত্রের হেডলাইন থেকে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলায় বড় শিরোনামে ছাপা হয়, খন্দকার মোশতাক নয়া রাষ্ট্রপতি। এর নিচে ছোট শিরোনামে লেখা হয়, শেখ মুজিব নিহত: সামরিক আইন ও সান্ধ্য আইন জারি: সশস্ত্র বাহিনীসমূহের আনুগত্য প্রকাশ।
১৫ আগস্ট বেতারে মেজর শরিফুল হক ডালিমের একটি ঘোষণা এসেছিল, স্বৈরাচারী মুজিবকে’ উৎখাত করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি ইসলামি রাষ্ট্র। এরপর আরো অনেকবার তার এ ভাষণ প্রচারিত হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়টি বলা হয়নি। পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের হত্যার কথাও বলা হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমস ১৫ আগস্টেই বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর ছাপায়। কিন্তু তারাও অন্য ২০ জনকে হত্যার বিষয়ে কোনো সংবাদ ছাপেনি। ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের অন্য বিখ্যাত পত্রিকাগুলোর সংবাদ পরিবেশন ছিল এ রকমই। ১৬ আগস্ট ইত্তেফাকের মূল শিরোনাম ছিল, খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর শাসনক্ষমতা গ্রহণ। এতে লেখা হয়, ‘…শাসনভার গ্রহণকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বীয় বাসভবনে নিহত হইয়াছেন।’
ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের ১৬ আগস্টের সংখ্যায় ১৫ আগস্টের ডেটলাইনে লেখে, ‘ইসলাম ও পশ্চিমাদের সমর্থক একটি সেনা সমর্থিত সরকার ভোরে এক রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর আজ বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। উৎখাতের সময় বামপন্থী রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমানের প্রাণ গেছে…।’