আসলে একজনের মন্তব্যে মনে হচ্ছে যুদ্ধ চলছে : আইনমন্ত্রী বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের বিরামহীন লড়াই
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ না করায় বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের অন্তর্দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১১৬ অনুচ্ছেদ রেখে বিচারপতিদের শৃঙ্খলাবিধি করা হবে। কোনোভাবেই ১১৬ অনুচ্ছেদকে বাদ দেয়া যাবে না।
১১৬ অনুচ্ছেদ না রাখলে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে মনে করছেন সাবেক বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আইনজীবী শাহদীন মালিক অবশ্য বলেছেন, সরকার বিচার বিভাগে তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইছে। কিন্তু বিচার বিভাগ তো স্বাধীন। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা সম্পর্কে সরকার যা চাচ্ছে তাতে আমার কিছু বলার নেই। তারা একদিকে বলবে বিচার বিভাগ স্বাধীন অন্যদিকে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করবে। আমি এর কোনো সমাধান দেখছি না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পৃথকীকরণ হলো আবার সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। সরকার না চাইলে এর আশু কোনো সমাধান হবে না।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেছেন, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে যে ব্রিজ তৈরি করা উচিত তা করতে আইন মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বিচার বিভাগের ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।
এর আগে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতেই ন্যস্ত রাখায় বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। জাতীয় সংসদে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে কোনো যুদ্ধ নেই। কোনো যুদ্ধ চলছেও না। তবে, একজনের অনেক বক্তব্যে মনে হচ্ছে বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের একটা বিরাট যুদ্ধ চলছে। বিচার বিভাগের একজন কোনো বিষয় নয়। বিচার বিভাগ মানে অনেককে নিয়ে। বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য, বিচার বিভাগের কল্যাণের জন্য প্রধান বিচারপতি কথা বলতে পারেন। যেগুলো সমাধানযোগ্য, সেগুলো অবশ্যই সমাধান হবে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ঠিক রেখে শৃঙ্খলা বিধিমালা তৈরি হবে। আর সে মোতাবেকই আমরা চূড়ান্ত খসড়া দিয়েছি।
এদিকে আদালতের বাইরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথার ভিত্তিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হবে। আগামী রোববার ৬ আগস্ট বিষয়টি আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট জারি নিয়ে কয়েক মাস ধরে নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপড়েনের পর আইনমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে বিধিমালার একটি চূড়ান্ত খসড়া হস্তান্তর করেন। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন প্রস্তাবিত বিধিমালা হস্তান্তর করি তখনই প্রধান বিচারপতিকে বলে আসি, এরপরও যদি কিছু থেকে থাকে, সেই বক্তব্য জানালে আমরা সংশোধন করে নেব। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত