আশু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলাভূমিগুলোকে রক্ষা ও উদ্ধার
ফিরোজ আহমেদ
জনগণের তদারকি আর জবাবদিহিতা না থাকলে যেকোনো সঙ্কট নতুনতর দুর্নীতির আর লুণ্ঠনের সম্ভাবনাই কেবল সৃষ্টি করে। জলাবদ্ধতাও তাই করবে, যদি জনগণের এই বিপুল অর্থ ব্যয়ে নেওয়া প্রকল্পগুলোর গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকে. যদি একই তস্করদের হাতেই এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে। মানুষের ভোগান্তিকে জিম্মি করে এরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কতগুলো খরুচে প্রকল্পই কেবল হাজির করছে, ঢাকার নিন্মাঞ্চলকে রক্ষার কোনো চেষ্টাই তারা করছে না। এই যে এত খাল নদী দখল নিয়ে কথা, এখন পর্যন্ত কি কোনো দখলকারীর শাস্তি হয়েছে? তাদের ছবি পত্রিকায় ছাপা হোক, তাদের জরিমানা হোক, তাদের প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হোক।
কিন্তু সত্যি বলতে কী, এই দখলের মতই কিংবা হয়তো আরও গুরুতর জলাবদ্ধতার কারণ অরিকল্পনা। এই কারণেই জলাবদ্ধতা শুধু অপরিকল্পিত পুরাতন ঢাকায় হয় না, একদম নতুন আবাসিক এলাকা উত্তরাতেও ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে থাকে কয়েক ঘন্টা। কারণ নিচু জলাভূমি দখল ও ভরাট করে স্বয়ং সরকার এই জায়গাগুলো আবাসিক এলাকায় পরিণত করেছে। ফলে এখানকার নর্দমাগুলো বেশ চওড়া হবার পরও, এবং বিশেষ করে ময়লা ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো হবার পরও এখানে অনেকগুলো সড়কে পানি জমে। কারণ নর্দমা দিয়ে পানিটা যাবে কোথায়! সেই জায়গাগুলোই আর নাই। ফলে স্থানীয় হ্রদ কিংবা তুরাগের মত নদীতে পৌঁছাবার ধীর প্রক্রিয়অতে পানিটা জমেই থাকে। উত্তরার এই অভিজ্ঞতা থেকেই বোঝা যাবে ডাবের খোসা পলিথিন ইত্যাদি নগরকর্তাদের অজুহাত মাত্র, আসল কারণ তাদের পরিকল্পনার ব্যর্থতা।
জলাবদ্ধতার মৌলিক কারণ জল ধরে রাখার মতো জায়গার অভাব, জল সরে যাবার মত জায়গার অভাব। ময়লা ইত্যাদি খুবই তুচ্ছ বিষয় এখানে। এদকম গাণিতিক ছক কষে হিসাব করেই তো আপনি বলতে পারবেন এত ঘনমিটার পানি এই পরিমান জায়গায় জমেছে, তার নিষ্কাশিত হতে এত সময় লাগবে!
ফলে এই নগরীতে এমন আবাসন পুনর্গঠন করতে হবে যেখানে প্রথম পর্যায়ে পাড়াতো ভিত্তিতেই পানির একটা অংশকে ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকে। কর সুবিধা প্রদান কিংবা কর আরোপ করে জমির ব্যবহারকে পুরো বদলে দেওয়া সম্ভব মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ করে। আর আশু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলাভূমিগুলোকে রক্ষা ও উদ্ধার।
এটা মনে রাখলেই আমরা বুঝতে পারব, ঢাকার জলাবদ্ধতার কেবল কারিগরি ও প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান হয়তো সম্ভব, কিন্তু তা অবিশ্বাস্য বিপুল ব্যায়ের কারণ হবে। আর আমাদের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে এমন সমস্যাই দেশি বিদেশি প্রকল্পওয়ালাদের জন্য পোয়াবারো!
একটু চোখ খোলা রাখলেই আমরা দেখব জলাবদ্ধতার হাত থেকে উদ্ধারের নামে প্রকল্পবাজি আসলে ইতিমধ্যই শুরু হয়ে গেছে।
লেখক: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
ফেসবুক থেকে