যে কারণে সমাজে ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটে
অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান
নারী-শিশু নির্যাতন, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা আমাদের সমাজে এখনো আছে। নারী-শিশু, কিংবা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন তো আমাদের কালচারের মধ্যে আছেই। কিন্তু বড় সমস্যা হচ্ছে, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কিছু মানুষ ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো ঘটনায়, যে ঘটনার ঘৃণা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।
আমি এখানে দুটো জিনিস দেখি, তার মধ্যে একটা হচ্ছেÑ বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় থাকে, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এমন কিছু মানুষ ভীড় করে যাদের কোয়ালিটি কম, তারা বিভিন্নভাবে তোষামোদি, তেলবাজি করে চলে। যারা এসব করতে পারে তারা সামনে চলে আসে। যাদের আমরা বলি, সাইকো ফ্যান। দেখা যায় এদের বড় একটা অংশেরই পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যেও এই জিনিসটা আছে। অর্থ্যাৎ পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব জায়গায় দেখা যাবেÑ যাদের কোয়ালিটি কম, যারা অন্য দল থেকে আসে তাদের মূল লক্ষ্য থাকে একেবারে ‘কী’ পজিশনে যারা আছে তাদেরকে যেভাবেই হোক সন্তুষ্ট করা। তোষামোদ করে করে একসময় তারা ক্ষমতাবান হয়ে যায়। একজন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, সহযোগিতা করছে অন্য একজন নারী! এমনটা কী করে হয় বা হতে পারে?
সমাজের মঙ্গলের জন্যই ধর্ষণ, শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলোকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। হাইলাইট করা দরকার। শুধু সমালোচনা করলেই তো সমাজ এগোবে না, সবাই মিলে এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের আশার জায়গাটা হচ্ছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য। তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তিনি বলেছেন, অপরাধী যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ এটা মধ্যযুগীয় বর্ববরতাকেও হার মানায়। আমি তাকে স্যালুট করি। সব জায়গায় যদি এ ধরনের পুলিশ অফিসার থাকত, তা হলে এসব ঘটনা হয়তো আরও কমে আসত।
বগুড়ার ধর্ষণ, তারপর মা-মেয়েকে ন্যাড়া করার ঘটনায় অভিযুক্ত সরকার দলীয় লোক হলেও তাকে আটক করেছে পুলিশ। তুফান সরকার, তার স্ত্রী এবং শাশুরী ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে। এটা খুব পজেটিভ দিক। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে যেন সমাজ থেকে অপরাধীদের বিতারিত করা যায়। তবে সমাজকে শতভাগ অপরাধমুক্ত করা আসলে সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্ব, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক সমাজেও প্রতি ২ মিনিটে একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এ ধরনের অপরাধ যারা করে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি যদি নিশ্চিত করা যায় তা হলে অপরাধীরা আর এমন কাজ করতে সাহস পাবে না। ঘটে যাওয়া সবগুলো ঘটনার যদি বিচার নিশ্চিত করা যায় তা হলে একদিকে যেমন অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে, অন্যদিকে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আস্থা বাড়বে প্রশাসনের প্রতিও।
পরিচিতি: অপরাধবিজ্ঞানী
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান