অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রধান বিচারপতি আপনারা জাজদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন
এস এম নূর মোহাম্মদ : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনারা প্রধান বিচারপতি ও কোর্টের স্বাধীনতা খর্ব করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা কি কিছুই বলতে পারব না? আমরা কি কোর্টে বসে মন্তব্য করতে পারব না? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। গতকাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আরও ২ সপ্তাহ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আরও দুই সপ্তাহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
গতকাল শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা জাজদের (বিচারকদের) মধ্যে ডিভিশন (বিভক্তি) সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। কিছু কিছু মন্ত্রী এজলাসে বসে কথা বলার বিষয়ে মন্তব্য করেন। এটা কি ফেয়ার? আপনাকে প্রশ্ন করছি। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুই দিক থেকে বক্তব্য আসে। বক্তব্য মিডিয়া লুফে নেয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি কেন একথা বলছেন? বিচারে আমরা পলিটিক্যাল মন্তব্য দেই না। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বক্তব্য দেই। বিচার বিভাগে যখন যে ইস্যু চলে আসে। যেমন আজকে মোবাইল কোর্ট সম্পর্কে না বললে কী থাকল?
এ সময় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, শৃঙ্খলা বিধির খসড়ায় গেজেট প্রকাশের বিষয়টি আমরা সুপ্রিম কোর্টের কথা অনুসারে বলেছিলাম। কিন্তু আপনারা সেখানে সরকারের কথা বলেছেন। এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, পলিটিক্যাল কথা বলছি না। মি. অ্যাটর্নি জেনারেল, আপনারা জাজদের মধ্যে ডিভিশন সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। পত্রিকায় এসেছে একজন, একজন বলেছেন। কোর্ট প্রসিডিং-এ আদালতের কার্যক্রমে যা হয়, তা নিয়ে পার্লামেন্ট এবং পাবলিকলি কথা বলার সুযোগ নেই। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, মাসদার হোসেন মামলার ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের ‘ক’ এর ব্যাখ্যা দিয়ে ওই মামলার রায় হয়েছে। এখন যদি আপনাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা শুনতে হয় তাহলে দুঃখজনক।
এর আগে গত রোববার শৃঙ্খলা বিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়। সে সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত। নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের যে ক্ষমতা সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্ট ‘নিয়ে নিতে চায়’ বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মন্তব্যে প্রধান বিচারপতি সেদিন বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে আইনমন্ত্রীর দেওয়া বিধিমালার খসড়ায়। তাহলে হাইকোর্টের কী থাকল? সবই তো মন্ত্রণালয়ের। ১৮৬১ সালে কলকাতা হাইকোর্ট হয়েছে; তখন থেকে হাইকোর্টের বিচারকরা নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন। এ ব্যবস্থাই চলে আসছে। হাইকোর্ট কেন রাখবেন? হাইকোর্ট উঠিয়ে দিন।
এদিকে রোববারের আদালতের ক্ষোভ প্রকাশের পর গত সোমবার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমি সম্মান ও অধিকার রেখে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে বলতে চাই, আমি তো হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট ওঠানোর কথা বলি নাই। ডিসিপ্লিনারি রুলস দিয়ে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট ওঠে না। এজলাসে বসে আপনার এগুলো বলার তো দরকার হয় না। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ