মুখোমুখি অবস্থানে অ্যাকর্ড ও গার্মেন্টস মালিকরা
আরিফুর রহমান তুহিন : পূর্বের যে কোন সময়ের থেকে বর্তমানে সব থেকে খারাপ সময় পার করছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানিতে মাত্র ০.২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশের ৮২ শতাংশ রপ্তানি আয় করা দেশের সর্ববৃহৎ এই শিল্প। লোকসানের মুখে পরে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার কারখানা। বেকার হয়েছে কয়েক লাখ সাধারণ শ্রমিক। এছাড়া কোম্পানির খরচ কমাতেও বিভিন্ন সময়ে ছাঁটাই করা হচ্ছে কর্মরত শ্রমিকদের। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। এই শিল্পে যখন এমন নাজুক অবস্থা, ঠিক তখনই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড। ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসে প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর দেশের পোশাক শিল্প (গার্মেন্টস)-এর অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে আসে ক্রেতারা। অ্যাকর্ড ও অ্যালাইন্স নামে দুটি জোট গঠন করে তারা। তখন বাংলাদেশ সরকার এবং বিজিএমইএ তাদের এই সহযোগিতাকে স্বাগত জানায়।
জোট দুটি দেশের আড়াই হাজারের অধিক কারখানা পরিদর্শন করে এবং সেগুলোর বিভিন্ন সমস্যাগুলোর উপর পর্যবেক্ষণ দেয়। চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাকর্ড’র চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তারা আরও ৩ বছর পরিদর্শন চালাবে বলে ঘোষণা দেয়। জুলাই মাসের শেষের দিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান প্রকাশ করার পরেই নড়েচড়ে বসে বিজিএমইএ। তাদের বক্তব্য বর্তমানে পোশাক খাতে যে দুরাবস্থা চলছে এর জন্য অন্যতম দায়ি অ্যাকর্ড।
বিজিএমইএর সদস্যদের মতে, অ্যাকর্ড অন্য কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পোশাক শিল্প পরিবদর্শনের নামে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈদেশিক আয়ের উৎস ধ্বংস করতে নেমেছে। তাই তারা অ্যাকর্ড খেদাও আন্দোলনে নেমেছে। গত ৩০ জুলাই রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক জরুরি সাধারণ সভায় এই শিল্পের সাবেক বর্তমান প্রায় সব নেতা উপস্থিত থেকে অ্যাকর্ড’র বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা প্রতিষ্ঠানটিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে তুলনা করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পোশাক কারখানার মালিক জানায়, অ্যাকর্ড নিরাপত্তার নামে দেশের পোশাক কারখানার মালিকদের হেনস্থা করছে। তাদের দেয়া শর্ত পূরণ করতে গেলে মালিকদের দেউলিয়া হতে হবে। অ্যাকর্ড’র বিড়ম্বনায় অনেক মালিক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। তার মতে, কেউ ১০০ কোটি টাকা খরচ করে যদি মাসে ১০ লাখ টাকা আয় করে তবে ব্যবসায়ীরা কেন এখানে ইনভেস্ট করবে।
আরেক কারখানা মালিক বলেন, অ্যাকর্ড নিরাপত্তার অজুহাতে কারখানা পরিদর্শন করছে। কিন্তু তারা যাদের পর্যবেক্ষণে পাঠাচ্ছে তাদের ঘুষ না দিলে কারখানার মান যতই ভাল হোক পর্যবেক্ষণের আওতায় ফেরে দেয়। এছাড়া উদ্ভট কিছু পর্যবেক্ষণতো আছেই। তাই তাদের অ্যাকর্ড’র বিরুদ্ধে এই অবস্থান।
বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ রপ্তানি সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, অ্যাকর্ড দেশের পোশাক শিল্প পরিদর্শনের নামে বিভিন্নভাবে কারখানার মালিকদের যে হেনস্থা করছে তারা তাদের সেই কষ্ট শেয়ার করছে। আর কেউ কষ্ট পেলে তা বলতেই পারে। অনুষ্ঠানটি বিজিএমইএর আয়োজনে হলেও এখানে যারা বক্তব্য দিয়েছে তারা সবাই সাধারণ সদস্য। তাদের বক্তব্য বিজিএমইএ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে সরকারের সাথেও আলোচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, অ্যাকর্ড আমাদের সাথে কারখানার উন্নয়নে সহযোগিতা করার যে প্রস্তাব দিচ্ছে তাকে বিজিএমই্এ স্বাগত জানাচ্ছে। সেই সাথে কারখানা মালিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টিও দেখতে হবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ