ইউনূসকে বাঁচাতে বাংলাদেশকে দমনের চেষ্টা করেছিলেন হিলারি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর হুমকি-ধামকি ও চাপ প্রয়োগ করেছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অন্যতম দাতা ও ক্লিনটন পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইউনূসকে বাঁচাতে হিলারি বাংলাদেশের ওপর অনৈতিক চর্চা করেছিলেন। মার্কিন দৈনিক ডেইলি কলারের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ হয়েছে গতকাল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. ইউনূসের দুর্নীতির তদন্ত থামাতে বাংলাদেশকে দমনের চেষ্টা করেছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার এ সংক্রান্ত দুটি নথি দিয়েছে। প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘হার্ড-বল’ কৌশল ব্যবহার করে ক্লিনটন তার কোটিপতি বন্ধু এবং ফাউন্ডেশনের দাতাকে সাহায্য করার জন্য বিরক্তিকর ছায়া ফেলেছিল।
এসব নথির মধ্যে দেখা গেছেÑ গ্রামীণ ব্যাংক নামে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। তদন্ত কাজে প্রথমেই বাঁধা আসে হিলারির পক্ষ থেকে। ইউনূসকে বাঁচাতে হিলারি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, দূতাবাস এবং বিশ্ব ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি পরিকল্পনা করেন। পরে ইউনূসকে ওই ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনূসের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ৩ লাখ ডলারের বেশি দান করেছিলেন তিনি।
ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১০ সালে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হন। এর মধ্যে ডেনমার্কের ডকুমেন্টারিতে উঠে আসে তিনি কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছেন। এই অভিযোগ তদন্তে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তখনি ইউনূসের হয়ে ক্লিনটন বারবার এবং সরাসরি বাংলাদেশকে দমনের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক যে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নেবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিতে ও অপমান করতে পদ্মা সেতু ইস্যুতে ক্লিনটনের পদক্ষেপ সাজানো হয়। এ প্রসঙ্গে কলারের প্রতিবেদনে বলা হয়, হিলারি ক্লিনটনের এই অনৈতিক চাপ প্রয়োগ কৌশল ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের দাতার পক্ষে বিশ্বব্যাংককে ব্যবহার মার্কিন সিনেটের কমিটিতে চলমান তদন্ত আরো বিস্তিত হতে পারে। সিনেটের বিচারবিভাগীয় কমিটি খুব ভালোভাবেই বিষয়টি তদন্ত করছে।
ইউনূসের তদন্ত বন্ধ করতেই সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক হিসাব তদন্ত করা হবে বলে শেখ হাসিনাকে হুমকি দেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে চলতি বছরের ১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর ও সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলি বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনের কাছে বক্তব্য জানতে চান।
ডেইলি কলারকে চাক গ্রাসলি বলেন, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের দাতাকে বাঁচাতে বিশেষ বিবেচনার জন্য আর্থিক হিসাব বিভাগের তদন্ত ব্যবহার করে অথবা অন্য কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না তা জানতে পররাষ্ট্র দফতরের কাছে জবাব চাওয়া হবে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হিলারি এ বিষয়ে সরাসরি যুক্ত হন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি পদ্মা সেতুর দুর্নীতি এবং জয়ের বিষয়ে দীপু মনির সঙ্গে আলোচনা করেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী