প্রতিশ্রুতি পূরণ মোমিনের আদর্শ
ওয়াদা। অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি। ইংরেজিতে চৎড়সরংব, ঈড়সসরঃসবহঃ বলে। পরিভাষায় ‘কোন কথা কাজ বা বস্তু প্রদান বা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার করাকে ওয়াদা বলে’। অথবা ‘কারো সাথে মৌখিকভাবে বা লিখিতখভাবে চুক্তি করা বা কথা দেয়াকে ওয়াদা, অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি বলে’। ওয়াদা রক্ষা করা ইসলামি শরীয়তে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ওয়াদা পূরণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর’ (সুরা আল মায়িদা : ০১)। ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হয়। সমাজের শান্তি-শৃংখলা রক্ষার্থে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা আবশ্যক। ওয়াদা ভঙ্গ করাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুনাফিকদের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াদা ভঙ্গ করাকে মুনাফিকের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করে বলেন “(মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য সমূহের একটি হলো) যখন সে ওয়াদা করে, তখন সে তা ভঙ্গ করে” (বুখারী, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে আবু শাইবা, শরহে সুন্নাহ)
ইসলামি শরীয়তে ওয়াদা পরিপূর্ণ করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ওয়াদা পরিপূর্ণ করা ব্যক্তির ধার্মিকতার পরিচায়ক। কেননা, যে ওয়াদা পূর্ণ করে না তার ধার্মিকতা পরিপূর্ণ হয় না। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘যে ব্যক্তি অঙ্গীকার পূর্ণ করে না তার দীনদারী নেই’ (মুসনাদে আহমদ)। ওয়াদা পালন বা অঙ্গীকার পূরণ করা ঈমানের অঙ্গ। তা ভঙ্গ করা জায়েয নেই। ওয়াদা পূর্ণ করার গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে’ (সুরা আল ইসরা : ৩৪)। কারও সাথে অঙ্গীকার করার পর অঙ্গীকার ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহর অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু এ ভঙ্গ করার কারণে কোন নির্দিষ্ট কাফফারা দিতে হয় না, বরং পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর পিঠে একটি পতাকা লাগিয়ে দেয়া হবে, যা হাশরের মাঠে তার অপমানের কারণ হবে’। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, যখন কোন লোক তার ভাইয়ের সাথে ওয়াদা করে এবং তার নিয়ত থাকে যে, সে ওয়াদা পালন করবে। কিন্তু সে (কোন কারণ বশত) তা পালন করল না এবং ওয়াদা মোতাবেক যথাসময়ে আসল না। তাহলে তার কোন গোনাহ হবে না’ -(আবু দাউদ, তিরমিজি)।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াদা করে কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেননি। বরং ওয়াদা পরিপূর্ণ করার জন্য প্রাণাদিক চেষ্টা করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু হাসমা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তাঁর নবুওত প্রাপ্তির আগে বেচা-কেনা করেছিলাম। যার কিছু মূল্য বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তাঁর সাথে ওয়াদা করেছিলাম যে, নির্দিষ্ট একটি স্থানে বাকি মূল্য নিয়ে উপস্থিত হব। আমি তা ভুলে গেলাম। তিন দিন পরে আমার স্মরণ হল। (এসে দেখলাম) তখনও তিনি নির্দিষ্ট স্থানে অপক্ষমান আছেন। (আমাকে দেখে) তিনি বললেন, তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছো। আমি এখানে তিনদিন যাবত তোমার অপেক্ষা করছি’ (আবু দাউদ)।
আমাদের সমাজে অঙ্গীকার করে পূর্ণ না করার অহরহ উদাহরণ বিদ্যমান। জনগণকে নির্বাচনী সময়ে নানাবিধ অঙ্গীকার ও প্রলোভন দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে ধোঁকা দিয়ে অঙ্গীকারকে মাটিতে মিশিয়ে দেন। শুধু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী নন, সাধারণ মানুষজনও ওয়াদা পূরণে অনেক উদাসিনতা করেন। যা মোটেও সমীচীন নয়। তাছাড়া আমাদের সমাজের অনেক সম্মানীত লোকও আছেন যারা ওয়াদা করে তা পূর্ণ করেন না। অথচ প্রবাদ আছে, ‘সম্মানীত লোক ওয়াদা করলে তা পূর্ণ করেন’। আমরা আমাদের কৃত অঙ্গীকার সমূহ যথাযথভাবে পরিপূর্ণ করতে পারলে সমাজে লোকদের নাভিশ্বাস হতে হত না। সমাজ আরো এগিয়ে যেত কাঙ্খিত লক্ষ্যে। আসুন সমাজকে এগিয়ে নিতে কৃত অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেই। ওয়াদা পূরণ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই।