যুগে যুগে হজ
মাহফুয আহমদ
বোখারি ও মুসলিমে সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি হজে গেল এবং কোনো অশ্লীল ও অন্যায় কাজ করল না, সে নবজাতকের মতো হয়ে ফিরল। অর্থাৎ তার গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আবু হুরায়রা আরও বর্ণনা করেন যে, নবীজি বলেছেন, এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহর মধ্যবর্তী সময়ের (সগিরা) গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। আর জান্নাতই হচ্ছে মকবুল হজের একমাত্র প্রতিদান। (সহিহ বোখারি: ১৭৭৩, সহিহ মুসলিম: ৪৩৭)
এজন্য পুণ্যবান পূর্বসূরি মনীষীগণ হজ এবং ওমরাহ আদায়ে খুবই আগ্রহী ও যতœবান ছিলেন। হজ পালনে তাদের যে স্পৃহা, অভিপ্রায় ও প্রাণবন্ততা ছিল তা এককথায় অতুলনীয়। আমরা হয়তো এখন সেগুলো কল্পনা করাও কঠিন। অনেক আলেম এ বিষয়ে স্বতন্ত্র বই রচনা করেছেন। তন্মধ্যে শায়খ হোসাইন আল আফানির ‘সালাহুল উম্মাহ ফি উলুওয়িল হিম্মাহ’ নামক বইটি উল্লেখযোগ্য। সে বইয়ে লেখক এজাতীয় অনেক দুর্লভ ও সুখপাঠ্য তথ্য সন্নিবেশিত করেছেন।
সাহাবিদের হজ : সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এর অন্যতম শিষ্য নাফে (রহ.) বলেন, ইবনে ওমরের সঙ্গে আমি ৩০ বারেরও বেশি হজ ও ওমরাহর সফর করেছি। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৫/৯৭) হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) ১৫ বার হজ আদায় করেছেন। (প্রাগুক্ত) হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) যাতু ইরক নামক স্থান থেকে এহরাম পরিধান করেন এবং হালাল হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর জিকির ব্যতীত কোনো কথা বলেননি। তাবেয়িদের হজ : তাবেয়ি আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ নাখায়ি (রহ.) হজ ও ওমরাসহ ৮০ বার বায়তুল্লাহর জিয়ারত করেছেন। আমর ইবনে মায়মুন (রহ.) ৬০ বার হজ ও ওমরাহ আদায়ের সৌভাগ্য লাভ করেছেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহ.) নিজে বলেন, আমি ৪০ বার হজ আদায় করেছি।
সাঈদ ইবনে জুবাইর (রহ.) প্রতিবছর দুইবার ইহরাম বাঁধতেন; একবার হজ এবং আরেকবার ওমরাহ আদায়ের জন্য। মুসলিম ইবনে ইয়াসার (রহ.) প্রতিবার হজে যেতেন এবং নিজ খরচে আরও কয়েকজনকে হজ আদায় করতে সঙ্গে নিতেন। হারুন রশিদের হজ : প্রসিদ্ধ আছে যে, খলিফা হারুন রশিদ একবছর জিহাদে থাকতেন এবং আরেকবছর হজে যেতেন।
জনৈক আরব কবি তো বলেছেন, যে আপনার সাক্ষাত চাইবে, সে হারামাইন না হয় ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্তে আপনাকে পাবে। বাদশাহ হারুন রশিদের নিয়ম ছিল, তিনি যে বছর হজে যেতেন সে বছর আরও একশো জন ফকিহ এবং তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিতেন। আর যে বছর তিনি নিজে যেতে পারতেন না, সে বছর নিজে পূর্ণ খরচাদি প্রদান করত তিনশো জনকে হজে পাঠাতেন। সূত্র : ওফায়াতুল আয়ান ও তারিখুল ইসলাম লিজ জাহাবি প্রভৃতি।
ইবনুল কায়্যিমের হজ : আল্লামা ইবনে রাজাব হাম্বলি (রহ.) বলেন, হাফিজ ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বহুবার হজ করেছেন। তিনি মক্কায় পড়ে থাকতেন। মক্কাবাসী তার অত্যধিক ইবাদত এবং প্রচুর তাওয়াফের কথা মুগ্ধতার সহিত বর্ণনা করত। ‘মিফতাহু দারিস সাআদাহ’ নামক মূল্যবান গ্রন্থটি তিনি মক্কায় বসেই লিখেন। তার বক্তব্য হলো, এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিরাট উপঢৌকন যে, আমি যখন দুনিয়ার সবকিছু পেছনে ফেলে তাঁর দরবারে এসে হাজির হলাম এবং নিজের সবকিছু তাঁর নিকট সোপর্দ করে দিলাম, তখনই তিনি আমার হৃদয়ে এমন একটি গ্রন্থ রচনার সুযোগ-সৌভাগ্য দান করলেন। (জায়লু তাবাকাতিল হানাবিলা, ২/৪৪৮)