কা’বা ঘরের ইতিকথা
মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন বা স্তম্ভ। হজ আরবি শব্দ। ইমাম নববী (রহ.) হজ মাসদার অর্থ হল ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়তের নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট সময়ে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফে গিয়ে কতগুলো স্থানের জিয়ারত করাকে হজ বলা হয়। ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) এর মতে, বিশেষ কিছু আমল-সম্পাদনসহ পবিত্র কাবাগৃহের উদ্দেশ্যে গমন করাকে হজ বলা হয় (তানজিমুল আশতাত)
হজ একটি ব্যাতিক্রমধর্মী ইবাদত, ইসলামে অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে স্থানের সাথে তেমন কোন সম্পর্ক নেই। যেমন: সালাত মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করলে অধিক সাওয়াব হয়, তবে অন্য যে কোন স্থানে সালাত আদায় করলে হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে হজ্ব নিদ্রিষ্ট স্থান ও সময়ের সাথে সম্পৃক্ত ইবাদত।একজন মুসলমান নর-নারীর জন্মস্তান যেখানেই হোক না কেন, তাকে এই কার্য সম্পাদনের জন্য পবিত্র মক্কা আল মুকাররামায় যেতেই হবে। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সায়ী, মিনাও আরাফাতে অবস্থান, মুযদালিফায় রাত্রিযাপন, জামরায় কংকর নিক্ষেপ ও এ কাজগুলো করতে হবে। হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় মূলত ইহরাম বাঁধার মাধ্যমে আর শেষ হয় বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে। যে মুসলমান আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থবান;জীবনে একবার হজ সম্পন্ন করা তার উপর ফরজ। পৃথিবীর সকল দেশের মুসলিম নর-নারী যখন হজ্জের জন্য জিলহজ্জ মাসে পবিত্র মক্কায় সমবেত হয় তখন এই অবস্থান গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশ্ব সম্মেলনে পরিণত হয়। লাব্বাইক, লাব্বাইক ধ্বনীর মাধ্যমে শুরু হলে এক মহা সম্মেলন পবিত্র কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে পাপরাশি থেকে মুক্তির শিহরণ জাগায়। মুসলিম ভাই বোনেরা আল্লাহর মেহমান হওয়ার আনন্দে উজ্জীবিত হয়ে পরম তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ করে।
হযরত আদম (আ.) দুনিয়ায় অবতরণের পরই ইবাদতের জন্য মহান আল্লাহ তাআলা এর নিকট একটি ঘর নির্মানের আবেদন জানানোর প্রেক্ষিতে তাকে কাবাগৃহ নির্মানের হুকুম দেয়া হয়। জিব্রাইল (আ.) মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে জমিনে অবতরণ করে কাবাগৃহের স্থানও নকশা নির্ণয় করে দেন।
আদম(আ.) সেই নকশানুযায়ী মক্কায় কাবাঘর নির্মানের কাজ সম্পূর্ণ করেন। (শুয়াবুল ঈমান) মহান আল্লাহর ভাষায়, নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে, এঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারাজাহানের মানুষের জন্য হেদায়াত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মাকামে ইব্রাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভিতরে প্রবেশ করেছে সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। (সূরা:আলে ইমরান আয়াত নং-৯৬ও ৯৭)
আদম (আ.) কাবাগৃহ তাওয়াফের সূচনা করেছেন। তাঁর অনুসরণে পরবর্তীকালে তাওয়াফ অব্যাহত থাকে। কালক্রমে এই গৃঘ সংস্কারের প্রয়োজন হলে মহান আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আ.) কে কাবা ঘর পুনঃ নির্মানের আদেশ দেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন। আর স্বরন করুন, যখন ইব্রাহিমও ইসমাইল (আ.) কাবার ভীতগুলি উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল) হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। হে আমাদের রব, আমাদের আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত কওম বানান। আর আমাদের ইবাদতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চই আপনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। সূরা বাকারা:আয়াত নং-১২৬-১২৭)
আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ইব্রাহিম (আ.) নির্মাণ কাজ করলে জিব্রাইল (আ.) তাঁকে তাওয়াফ ও হজ্জের পদ্বতি শিখিয়ে দেন। তিনি নিজ পুত্র ইসমাইল (আ.)কে সাথে নিয়ে সে অনুসারে তাওয়াফ ও তৎকালীন হজ্জের যাবতীয় কাজ শিখে নেন। অতপর মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, এবং মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পাঁয়ে হেটে এবং সর্বপ্রকার কৃষ্ণকায় উঠের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দুরান্ত থেকে। (সূরা হজ্জ-আয়াত নং-২৭)