ইরান চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের দুর্ভাগ্য
স্টিভ এ্যান্দ্রেসেন/স্টিভেন সিমন : কোরিয় উপদ্বীপে যে উত্তেজনা বাড়ছে তা যথেষ্ট নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিকে অকার্যকর করতে স্থিরসংকল্পবদ্ধ বলেই মনে হচ্ছে। এবং এতে করে তিনি তার ঘনিষ্ট পররাষ্ট্র উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কয়েক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চাচ্ছেন। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের আগামী ৩ মাসের মধ্যে একটি উপায় খুঁজে বের করতে বলেছেন, যাতে ঘোষণা করা যায় ইরান ওই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এ উদ্যোগ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ব ও তার ক্ষমতাকে বিরাট এক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন। প্রথমত এধরনে উদ্যোগ ট্রাম্পের ঘনিষ্ট পররাষ্ট্র উপদেষ্টাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তা এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র মনোমালিন্যের সৃষ্টি করছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে কাজ করেছেন তাদের কাছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি চান তা উপহার দেওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, একটি বাজি ধরার মত উপায় হয়েছে যেখানে যা কিছু ঘটতে পারে, এমনকি ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি অজুহাত তৈরি হতে পারে।
তাহলে ইরানের ব্যাপারে ট্রাম্প যা চাচ্ছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল এইচ. আর. ম্যাকমাস্টার অথবা হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জেনারেল জন কেলি তাই হতে দেবেন ? কেউ হয়ত পদত্যাগ করতে পারেন, এধরনের দুর্ভাগ্য কিভাবে তারা সহ্য করবেন বা তাদের ইচ্ছা কি এটা কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু তারা পদত্যাগ করেন বা ইরানের ব্যাপারে ট্রাম্পের ইচ্ছাকে পূরণ করার চেষ্টা করেন, ইরানকে বিচারের এধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি পেশাদারদের জন্যে একটি স্পষ্ট পরাজয় সংকেত দেবে। এবং এ পরিস্থিতি চিন্তাবিদদের জন্যে জয় এনে দেবে।
ইরানকে এভাবে অস্বীকার করা হলে বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কে গুরুতর ফাটল সৃষ্টি করবে। প্যারিসে জলবায়ু চুক্তি থেকে বিরত হয়ে ট্রাম্পের ফিরে আসা ইতিমধ্যে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে সাংঘর্ষিক অবস্থানে নিয়ে গেছে, বাণিজ্যে জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে। সন্দেহ নেই ইউরোপ আশা করছে যে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শিগগির চুক্তি অকার্যকরের উদ্যোগ নিয়ে ট্রান্স-আটলান্টিক ঐক্যমত্য ছিন্নভিন্ন করার এক তীব্র প্রচেষ্টা অনুসরণ করবে না। ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে আকস্মিকভাবে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দরকষাকষির ওপর ভিত্তি করে রচিত এবং এ চুক্তি ভঙ্গের গুরুতর কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই মার্কিন অবস্থানকে এমন এক পর্যায়ে উপনিত করতে পারে যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনো উপায় বা পথ থাকবে না।