অতি বৃষ্টি-জলাবদ্ধতায় সংকটে শ্রমজীবি মানুষ
জাফর আহমদ: বৃষ্টি হলেই রাজধানীসহ আশেপাশের কম আয়ের মানুষের বসবাসের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে একদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে সময় মত কর্মস্থলে না যেতে পারার কারণে চাকরি হারাতে হচ্ছে। রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেটের কুনিপাড়া, আশুলিয়ার জামগড়া নারায়নগঞ্জের ডিএনডি এলাকা, গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।
মিরপুরের রুপপুর এলাকার নারী শ্রমিক জলি ও তার স্বামী গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করেন। কোন মতে সংসার চলে। বৃষ্টিতে তাদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে পড়ছে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি সহজে নামে না। বৃষ্টিতে গ্যাসের চুলা পর্যন্ত পানির নীচে পড়ে যায়। নিয়মিত কাজে যেতে পারে না, ফলে হাজিরা কাটা যাচ্ছে। শুধু তাই না ঘনঘন অফিসে অনুপস্থিত থাকার কারণে চাকুরী চলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরে ফতুল্লার পাগলা-রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা ক্ষুদে ব্যবসায়ী আবুল হোসেন। তিনি জানান, জলাবদ্ধতার কারণে ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রতিনিয়ত হাটুর উপরে পানি ঠেলে রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। দুষিত নোংরা পানি মাড়িয়ে অফিসে যাওয়ার কারণে চর্ম রোগ হচ্ছে। তার সাথে পানিবাহিত রোগ তো আছেই। সাভার আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার শ্রমিক বসবাস করা আবুল কালাম আজাদ ইপিজেডের একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন। তার স্ত্রী কাজ করেন জামগড়ার একটি কারখানায়। তারা দুই সন্তান নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করেন। আধাপাকা ঘরে থেকেও মাসে ৪ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয় তাদের। যেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে টয়লেট, গোছল ও চুলায় রান্না করতে হয়। বৃষ্টিপাতের কারণে তার বাসার চার পাশে রাস্তায় জমে আছে দুষিত নোংরা পানি। প্রতিদিন হাটুপানি মাড়িয়ে কারখানায় যাওয়া আসা করতে হয়। জমে থাকা পানির কারণে বাচ্ছারা ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারে না। আশুলিয়া জমগড়া শিল্পাঞ্চলের সব জাগায় জলাবদ্ধতার এই সমস্য রয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক জলাবদ্ধতার নোংরা পানি মাড়িয়ে কারখানায় যাওয়া আসা করে। মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হতে হচ্ছে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার নারী শ্রমিক শাহানা জানান, তিনি একটি সোয়েটার কারখানায় কাজ করেন। তার বাবা রিক্সাচালক, মা কোন কাজ করে না বাসায় থাকে। শাহানা বাবা-মা কে নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হিন্দুবাড়ি মোড়ে কমদামী ভাড়া বাসায় থাকেন। শাহানা মাসে ৭ হাজার টাকা রোজগার করে আর তার বাবা যা রোজগার করে তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে। সম্পাদনা : ফেরদৌস