তুফান বেগে ধর্ষণ, দায় কি কিছুটা আমাদেরও!
ডা. জাকির হোসেন
সম্প্রতি বগুড়ার একটি ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই দলীয় ক্যাডার ও তাদের অস্ত্রধারী সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে একজন কিশোরীকে তুলে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। ঘটনার বেশ কিছুদিন পর গত ২৮ জুলাই ওই শ্রমিক নেতা তুফানের স্ত্রী আশা এবং স্ত্রীর কমিশনার বড় বোন রুমকি ধর্ষণের শিকার মেয়েটি এবং তার মাকে আবারও ক্যাডার পাঠিয়ে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে এনে তাদের বর্বরভাবে নির্যাতন করে নাপিত দিয়ে মাথান্যাড়া করে দেয়। নির্যাতন করার সময় ওই মহিলা কাউন্সিলর জোর গলায় বলেন, তোকে মারলে আমার কিছু হবে না, আমি তিনটি ওয়ার্ডের কমিশনার। মেয়েটি ছিল একটি গরিব ঘরের সন্তান। তার মা ঢাকায় একটি গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। সম্প্রতি তার মা চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওযার পর মেয়েটি পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হয়। মেয়েটি তাই একটি সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ করে দিতে ওই শ্রমিক নেতার দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু ওই অশিক্ষিত শ্রমিক নেতা তো শিক্ষার মূল্য বোঝার কথা নয়।
শিরোনামে বলেছিলাম দায় আমাদেরও। হ্যাঁ, সত্যি বলছি এই দায় আমরা সাধারণ নাগরিকরা এড়িয়ে যেতে পারি না। কোন পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। আমরা নির্বাচনের সময় ভাল, শিক্ষিত মানুষকে নির্বাচিত করি না। ঘটনার পর ওই এলাকার লোকজন অপরাধীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করেছে। কিন্তু ওই অপরাধী মহিলা কমিশনারকে কিন্তু এলাকার জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তখন এই অপরাধীর স্বপক্ষে, সকল সাধারণ জনগণই দেশদরদী, গরিবের বন্ধু, সৎ, চরিত্রবান ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষিত করে নানা রকম স্লোগানে ওই এলাকা মুখরিত করেছিল। দেশের একটি স্বনামধন্য রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম থেকে সে দলীয় মনোনয়ন নিয়েছে। আমাদের দেশের রাজনীতি কোনো নীতি নেই এটা আমরা সবাই জানি। এখানে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন কেনাবেচা হয়, এটাও আমরা সবাই জানি। কিন্তু জনগণ সচেতন থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চরিত্র বদলাতে বাধ্য হতো। এই সকল অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নেতা-নেত্রী দল থেকে মনোনয়ন পাবার সময় সাধারণ জনগণ দলে দলে মিছিল বের করলে কখনোই এই রাজনৈতিক দৃর্বৃত্তায়ন প্রশ্রয় পেত না।
যার হাত ধরে এই বাংলাদেশের সৃষ্টি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী কোনো সরকারই এই দেশে শিক্ষার আর মেধার মূল্যায়ন করতে পারেনি। দোষ শুধু তাই দলগুলোর উপর দিয়ে লাভ নেই। সবার আগে আমাদের সচেতন হবে। কোনো অশিক্ষিত খারাপ লোক দলীয় মনোনয়ন পেলেও যদি সাধারণ ভোটাররা সেটার প্রতিবাদ করত, তবে আজকে বাংলাদেশের চিত্র এ রকম হতো না। এটা বলতেই হবে, অপাত্রে ক্ষমতায়নের দায়ভার কিছুটা হলেও আমাদের উপরেও বর্তায়।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান