ধর্ষণ বন্ধে প্রয়োজন গণতন্ত্র ও আইনের শাসন
ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন আহমদ
ধর্ষণ একটি বেআইনি কাজ, জঘন্যতম অপরাধ। সমাজে এ ধরনের নৃশংসতা, বর্বরতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আমাদের আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, ধর্ষণের শাস্তি কী? এ ধরনের ঘটনা সমাজে আগেও ঘটত কিন্তু এখনকার মতো এত বেশি ছিল না। এখন মিডিয়ার কল্যাণে আমরা জানতে পারছি অনেক কিছুই। এখানে মিডিয়া খুব ভালো ভূমিকা পালন করছে। কোথাও যদি কোনো বেআইনি কাজ সংঘটিত হয়, তা যদি মানুষ না জানে তাহলে সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর বিচারের জন্য চাপ তৈরি হয় না। বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা জানার কারণেই মানুষ প্রতিবাদ করছে। রাষ্ট্রের কাছে প্রতিকারের আবেদন করছে অত্যন্ত জোরালভাবে। এখানে মিডিয়ার একটা পজেটিভ রোল আছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতি, ধর্ষণ-ধর্ষক, নিপীড়ক-নির্যাতন নিয়ে মানুষ এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার। ধর্ষকেরাও অপরাধ স্বীকার করছে। অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি দিয়েই আদালত ইচ্ছে করলে বিচার করতে পারেন।
সমাজে এ ধরনে ঘটনা কেন ঘটে? বড় একটা কারণ হচ্ছেÑ রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের যদি কোনো ঘাটতি থাকে বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি যদি দুর্বল হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যদি ক্রটি থাকে। সমাজ বা রাষ্ট্রে যদি জবাবদিহিতা না থাকে, তখন অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যায়। যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে বা সংকুচিত হয়, যদি ন্যায়বিচার না থাকে তাহলে এ ধরনের নেতিবাচক ঘটনা ঘটতে পারে। একজন অপরাধী সবসময়ই অপরাধী। তারা সবসময় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থাকতে পছন্দ করে। নিজেদের রক্ষার জন্য একেকটা দলের ছত্র-ছায়ার আশ্রয় নেয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জন্য সমাজে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সমাজে যদি গণতন্ত্র না থাকে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, যদি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র প্রমোট করা না হয়, তাহলে এ ধরনের অপকর্ম থামবে না। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে চরমভাবে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। এটাও আইনের শাসনের অভাবের ফল। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইনের শাসন কায়েম করা হলে, এমন ছোটখাটো পযায়ের নেতারা ভয়ে চুপ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যদি ইচ্ছা না থাকে, তাহলে দেশে আইনের শাসন কায়েম করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি চান সমাজে আমরা আইনের শাসন কায়েম করব, এ ধরনের অন্যায় হতে দেব না তাহলেই বন্ধ হবে এমন জঘন্যতম অপরাধ। আমরা যদি এদের সঠিকভাবে বিচার করতে পারি, দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি, তাহলে ধর্ষণের পথ বন্ধ হতে পারে।
পরিচিতি: সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি ও মহাসচিব, জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি
মতামত গ্রহণ: সাইফুল ইসলাম
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ