খরা কাটিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে একযোগে
বিশ্বজিৎ দত্ত : এক আশ্চর্য যোগসূত্র। একযোগে উঠে আসছে ইলিশ। বঙ্গোপসাগর থেকে পদ্মা হয়ে উজানে গঙ্গায়। আবার আরব সাগর থেকে সিন্ধু নদী বেয়ে উজানে কালান্দরের দরগায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে একযোগে ইলিশ ধরা পড়ছে। বর্ষা শুরু হয়েছে অনেক আগে। এই তিন দেশে বর্ষাও শুরু হয় প্রায় একই সময়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও পাকিস্তানের সিন্ধুতে। বর্ষার শুরুতে ইলিশের দেখা মিলছিল না। গত কয়েক দিনে ইলিশ ধরা পড়ছে অনেক। বাংলাদেশের পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গত কয়েক দিনে মাছ বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার কেজি। কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, এবারে প্রথমদিকে ইলিশ তেমন ধরা পড়ছিল না। এখন ট্রলারগুলো ভরে ভরে ইলিশ আসছে। মোহনার দিকেও ইলিশ ধরা পড়ছে প্রচুর। তিনি আশা করছেন এই বর্ষাতেও গতবারের চেয়ে ইলিশ বেশিই ধরা পড়বে।
ইলিশ সম্পর্কে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, ইলিশ উজান ঠেলে যত নদীর দিকে আসতে থাকে তত রূপালি হয়ে উঠতে থাকে। এটিই পদ্মার রূপালি ইলিশ। নদীতে ডিম পেরে ইলিশ আবার সাগরে ফিরে যায়। এরা ঝাঁকে ঝাঁকে সাগর থেকে নদীতে আসে। সাগরে এই ইলিশের রঙ থাকে অনেকটা কালচে আভা যুক্ত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এবার প্রথম দিকে ইলিশের আকাল ছিল। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড মৎস্যজীবী সংগঠনের সহ-সম্পাদক বিজন মাইতি জানান, গত কয়েকদিনে ইলিশ ভাল ধরা পড়েছে। ৩ দিনে ইলিশ ধরা পড়েছে ১১ হাজার কেজি।
পাকিস্তানের জং পত্রিকায় সিন্ধু প্রদেশের বিশেষ মাছ পাল্লা নিয়ে নিউজ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে বছরের খরা কাটিয়ে এবারে পাল্লা গত কয়েকদিনে প্রচুর ধরা পড়েছে। সিন্ধুর সেহওয়ালের মৎস্যজীবীদের মধ্যে হতাশা কাটছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী পাকিস্তানের এই পাল্লাকেই বলেছেন বাংলার ইলিশ। পাকিস্তানের অন্যতম সুফী সাধক শাহবাজ কলেন্দর বা ঝুলেলালের বাহন পাল্লা। দরগার সামনেই এর চিত্র রয়েছে। সেখানে ঝুলেলাল বসে আছেন পাল্লা নামের যে মাছটির উপরে তা আসলে বাংলার ইলিশ। এই পাল্লাও বর্ষাকালে সিন্ধু নদী বেয়ে নদীয় পীর কালান্দরের দরগা পর্যন্ত গিয়ে ডিম পেড়ে আবার ফিরে আসে সাগরে। যেমন বাংলার ইলিশ পদ্মা বেয়ে গঙ্গায় যায়। গায়িকা রুনা লায়লা, এই কলেন্দরের উদ্দেশ্যেই গান করেন, দমাদম মস্ত কলেন্দর, হোলাল মেরি পত রাখিয়ো বলা ঝুলেলালন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ