‘দুর্বলতা সক্ষমতা খুঁজে নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র’
ডা. মো. তাজুল ইসলাম
আগে ব্যক্তিত্বকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হতো। ওমুকে তেমন টাইপের ব্যক্তিত্ব, সে ওই টাইপের ব্যক্তিত্ব এভাবে বলা হতো। গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এভাবে কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট টাইপে ভাগ করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট টাইপে আটকে থাকে না। ফ্যাক্টর এনালাইসিস করে বর্তমানে ৫টি বিগ ফ্যাক্টর বের করা হয়েছে, যাতে সব মানুষের ব্যক্তিত্বের ধরন জানা যায়। এই ৫ ফ্যাক্টরের কোনটি কার মধ্যে কি পরিমাণে রয়েছে সেগুলো পরিমাপ করে ওই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে বর্ণনা করা হয়, নির্দিষ্ট টাইপে ফেলা হয় না। সে ৫টি ফ্যাক্টর হলোÑ ১. জীবন অভিজ্ঞতার প্রতি উন্মুক্ত মন। ২. বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন, নীতি জ্ঞানসম্পন্ন ৩. বহিঃমুখিতা ৪. অনুরূপ হতে/একমত হতে সম্মত থাকা ও ৫. নিউরোটিসিজম আপনি নিজেই যাচাই করতে পারবেন আপনার বৈশিষ্ট্য কেমন এবং কোনদিকে আপনি সবল ও দুর্বল।
দুই. উধারফ জবহফধষ- আমাদের ৩টি জীবন শিক্ষা নিতে বলেন: ১. আপনার মধ্যে খারাপ কিছু নেই: কেননা আপনার যেসব দুর্বলতা সেগুলো আপনার সক্ষমতা খুঁজে নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র (তাই দুর্বলতাকে ক্রটি হিসেবে গণ্য করার কারণ নেই)। ২. আপনি তখনি সফল হবেন যখন আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে যাবেন: আপনার ব্যক্তিত্বের যে অনন্য বৈশিষ্ট্য তার সঙ্গে খাপ খায় তেমন পরিবেশ পরিস্থিতি বেছে নিতে হবে, যাতে আপনার ওই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো পুরস্কৃত হয়, উৎসাহ ও সমর্থন পায়। এমন পরিবেশ নিজকে তৈরি করে নিতে হবে, এমনিতে পাওয়া যাবে না। যাদের বৈরী মনে হবে তাদের উপেক্ষা করুন ও যাদের সমমনা মনে হবে তাদের সান্নিধ্যে থাকুন।
৩. আপনার দুর্বল দিক আপনাকে ‘ভিন্নতা’ দেয়: আপনার ব্যক্তিত্বের কিছু দিক অন্যদের কাছে অদ্ভুত, কিম্ভুতকিমাকার মনে হতে পারে। এটি নিয়ে তারা উপহাস, হাসি-তামাশা করতে পারে। আপনি বরং এ ‘ভিন্নতাকে’ গৌরবের মনে করবেন। আপনি দশের মধ্যে নিজকে একাদশে উন্নীত করুন। অনেকেই উপরোক্ত ৩টি বিষয়ে আপত্তি করতে পারেন এই বলে যে এগুলো অবাস্তব ও অসামাজিক। কিন্তু এ কথাগুলো এই অধমের নয়, এগুলো বিখ্যাত ব্যক্তি ডেভিড রেন্ডাল এর। আর আপনি এগুলোর সঙ্গে একমত না হলে কার কি ক্ষতি? আপনি নিজের দুর্বলতা নিয়ে, বিরূপ পরিবেশ নিয়ে, ক্রটি বিচ্যুতি নিয়ে হাহাকার করুন, হীনমন্যতায় ডুবে থাকুন আর না হয় ডেভিডের কথাকে গুরুত্ব দিন। মনে রাখবেন নিজের সুখ ও উচ্চ আত্মমর্যাদাকে গুরুত্ব দিবেন না, অন্যদের অভিমত, মন্তব্যকে গুরুত্ব দিবেন সেটি আপনার চয়েজ। মূল কথা হচ্ছেÑ
১. নিজকে জানুন (সবল ও দুর্বল দিকগুলো)- ২. নিজে যা ও যে রকম তা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিন, ৩. নিজে যেমন তেমন থাকুন (অন্যকিছু রকমের হওয়ার ভান করবেন না) এরপর নিজকে আরও বিকশিত করতে, কার্যকর করতে চেষ্টা করুন।
লেখক: অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
সম্পাদনা: আশিক রহমান