মুখ থুবড়ে পড়েছে স্মার্টকার্ড প্রকল্প দেশেই স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে ইসি
সাইদ রিপন : নানা টানাপোড়েনের কারণে ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলোজিস (ওটি) স্মার্টকার্ড প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে মুখথুবড়ে পড়েছে এ প্রকল্পের কাজ। তবে খুব দ্রুতই দেশেই স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সূত্রে জানিয়েছে, অবার্থুর ব্যর্থতার কারণে কমিশন চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াবে না। গত ৩০ জুন পর্যন্ত ওটির সঙ্গে ইসির চুক্তির মেয়াদ ছিল। চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্নও হতে পারে কমিশন। কোম্পানিটি চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে বারবার ডাটাবেজ ব্যবহার করার শর্ত আরোপ করে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ওই কোম্পানিকে ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু তারা (ওটি) চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি তাই তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। দেশের স্বার্থে, রাষ্টীয় স্বার্থে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দেশিয় জনবল এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্টকার্ড উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, চুক্তি অনুযায়ী ব্ল্যাঙ্ককার্ড আমদানি করে বাংলাদেশে স্থাপিত মেশিনে তা প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) করা হবে। এরপর তা থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজের পুরোটাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের করার কথা। এসব শর্তে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের ওটির সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮১৬ কোটি টাকার ) চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি মানুষের হাতে এ কার্ড তুলে দেওয়ার কথা ছিল। পরে এই মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে। চুক্তির পর থেকেই প্রতি ধাপে এ কোম্পানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।
গত ৩ জুলাই ইসি সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে আইডিইএ প্রকল্পের পরিচালক স্মার্টকার্ডের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এ পর্যন্ত ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ ৭০ হাজার (২.৫৭ মিলিয়ন) মানুষকে এ কার্ড দেওয়া হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার (১০.৯৮ মিলিয়ন) কার্ড পৌঁছানো হয়েছে, কিন্তু বিতরণ করা হয়নি। কার্ড প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) করা হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার (১২.৪১ মিলিয়ন), যা লক্ষ্যমাত্রার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ফ্রান্স থেকে এ পর্যন্ত ব্ল্যাঙ্ক কার্ড এসেছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার (৬৬.৩৬ মিলিয়ন), যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আরও ২.৯৫ মিলিয়ন কার্ড পাইপলাইনে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিল নিয়েছে এ কোম্পানিটি। আরও কমবেশি ৩০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। ওই টাকা পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাজই করেনি প্রতিষ্ঠানটি। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ