নির্বাচনি রূপরেখায় সংলাপের প্রভাব দেখতে চান বিশিষ্টজনরা ভালো পরামর্শ গ্রহণ করে ইসিকে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও আনিসুর রহমান তপন : নির্বাচন কমিশনে শুরু হওয়া নির্বাচনী সংলাপের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে। শুরুতেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইসির সংলাপ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। তবে এই সংলাপ যেনো লোক দেখানো বা রুটিন ওয়ার্ক না হয়, ইসিকে তা খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, ইসির উচিত হবে ভালো পরামর্শগুলো গ্রহণ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সবার মতামত গ্রহণ করে একটি ভালো নির্বাচন দেওয়াই ইসির লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তারা বলেছেন, এই কমিশন চাইলে ইসি নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করতে পারবে। তারা একটি শক্তিশালী ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন,এই সংলাপের মধ্য দিয়ে সিইসি সরকারের সঙ্গে যে সমঝোতার কথা বলেছেন, তা যর্থার্থ এবং এতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের দায়িত্ব বাড়লো। তিনি বলেন, ইসিকে আস্থা অর্জনের জন্য এখনই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। আস্থা অর্জনের বিষয়টি সামনে চলে আসছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীনরা প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন। কিন্তু বিএনপি সভা করতে চাইলে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ইসির উচিত হবে এমন দুতিনটি কাজে অন্তত বাধা দেওয়া। তা হলেই ইসির প্রতি আস্থা আসবে। ইসি চাইলে সেটি পারেও। কারণ ইসি নির্বাচন সংক্রান্ত অনেক কাজ শুরু করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ইসি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী হলেই যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- তা নয়। সরকারেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। ইসি গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি যেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করলেন, প্রধানমন্ত্রীরও উচিত হবে রাজনৈতিক দল বা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আবহ তৈরি করা। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছে না। সে জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়। সে ক্ষেত্রে দায়িত্ব শুধু সরকারেরই বাড়লো তা নয়, বিএনপির দায়িত্ব বাড়লো। বিএনপির উচিত হবে যুক্তিসঙ্গত কথাবার্তা বলা ও যুক্তির মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, সংবিধানের ১২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা সুস্পষ্ট করা আছে। সেখানে বলা আছে, ইসি যেভাবে চাইবে, সরকার তাকে সেভাবেই সহযোগিতা করবে। এটি দায়িত্ব নয়, কর্তব্য। ফলে সিইসি যে সমঝোতার কথা বলেছেন, তা নতুন করে চাপ বা দায়িত্বের কিছু নয়। নতুন চাপও নয়। তবে সরকারের প্রতি সবার নজর থাকবে। ইসি যথার্থই বলেছে, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে। কারণ সংবিধানের ইসিকে সহযোগিতার কথা বলা আছে।
এই শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, বহুবার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। তাদের উপস্থিতি থাকবে। তবে পুলিশের যে কাজ, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করালে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কার দায়িত্ব বাড়লো- না বাড়লো, তার চেয়ে বড় বিষয় যেহেতু সরকার শক্তিশালী, তাই সরসকারের উপরই নির্ভর করে সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্যান্য দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগে না। কেউ ইসির ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। তবে আমি মনে করি, নির্বাচনের সময় সরকারের ভুমিকা ছোট হয়ে আসে। সুতরাং চাইলে বিদ্যমান সংবিধানের মধ্য থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সরকারের উদ্যোগ তো থাকবেই। সংবিধান অনুযায়ি নির্বাচন হবে। ইসি কাজ করবে। ইসিকে সেই সুযোগ করে দিতে হবে। সে দায়িত্ব সরকারের।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ইসি সরকারের কাছে যে ধরণের সহযোগিতা চাইবে, সরকার তা দেবে। কারণ সরকার সবদলের অংশগ্রহণে বরাবরই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকেই এ কথা বলে আসছেন। দলের প্রতি এমন নিদের্শও দিয়েছেন। সুতরাং এতে সরকারের উপর যে বেশি দায়িত্ব পড়লো, তা কিন্তু নয়। সংবিধান অনুযায়ি নির্বাচন করবে ইসি, তাকে সহযোগিতা করবে সরকার। এতে দায়িত্বের কম-বেশি কিছু নেই। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল ও মহলকে উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।