বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- ও ধন-রতেœর কল্প কাহিনী!
রাহাত মিনহাজ
১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরই সময়ের উল্টো স্রোতে চলতে শুরু করে বাংলাদেশ। মোশতাকের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার পরপরই শুরু হয় ধড়পাকড়। বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষদের একের পর এক গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হন জাতীয় চার নেতা, জিল্লুর রহমান, তোফায়েল আহমদসহ অন্যান্যরা। এরই মধ্যেই শুরু হয় অপপ্রচার। জাতির জনকের চরিত্রে কালিমা লেপনে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয় গণমাধ্যমকে। যে অপপ্রচারের অগ্রভাগে ছিল দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯৭৫ সালে ৩০ অক্টোবর এই পত্রিকায় ছাপা হয় একটি বক্স প্রতিবেদন। যার শিরোনাম ছিল ‘শেখ মুজিবের বাসভবনে ৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার ধন-রতœ পাওয়া গেছে’। প্রতিবেদনে বলা হয় ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর রোডের নিজস্ব বাসভবনে যেসব মূল্যবান জিনিসপত্র পাওয়া গেছে তার মধ্যে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের প্লাটিনাম, হিরা, মুক্তার সেট ও স্বর্ণালঙ্কার, ১৭ হাজার ৫০০ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে বাসস খবরে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনৈক মুখপাত্র গতকাল বাসসকে বলেছেন প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন দেশের দেওয়া বিপুল পরিমাণ উপহার সামগ্রী, বাংলাদেশি মুদ্রায় নগদ ৯৪ হাজার ৪৬১ টাকা এবং ৬২ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের অচল ঘোষিত ৬২১টি ১০০ টাকার নোটও সাবেক প্রেসিডেন্টের বাসায় পাওয়া গেছে। মুখপাত্র বলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন সামরিক অফিসার ও একজন পুলিশ অফিসারের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের একটি টিম সাবেক প্রেসিডেন্টের বাসভবনে গত ১৬ আগস্ট ও ২৮ আগস্টের মধ্যে বাসভবনে প্রাপ্ত জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করেন। যে সকল জিনিসপত্র পাওয়া গেছে তার মধ্যে ওয়াকি-টাকিসহ মূল্যবান বিদেশি জিনিসপত্র ও তিনটি ব্যক্তিগত গাড়িও রয়েছে। মুখপাত্র বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের বাসা ভবনে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার মধ্যে ৮ হাজার ৯৯৯ ভারতীয় মুদ্রা ও ৯ হাজার টাকার স্টালিং(পাউন্ড) রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, সাবেক প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে নিষিদ্ধনলের অস্ত্রশস্ত্র যেমন একটি ভারি মেশিনগান, দুটি এলএমজি, তিনটি এসএমজি, আটটি স্টেনগান, দশটি আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, ছয়টি গ্রেনেডসহ এসব অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ রয়েছে। মুখপাত্র আরও বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং তার স্ত্রী ছেলে মেয়ে ও পুত্রবধূদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ২২টি অ্যাকাউন্ট ছিল। এসব অ্যাকাউন্টের তিনটি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর নামে। এছাড়া একটি বাণিজ্যিক ফার্মের নামেও তার (সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী) একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল। এসব অ্যাকাউন্টে জমা ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আটক করা হয়েছে। তালিকায় একটি দলিলের কথা উল্লেখ রয়েছে যার মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী মিসেস ফজিলাতুন্নেছা খুলনার দৌলতপুরে পাঠ মূল্য স্থিতিশীলকরণ কর্পোরেশনের কাছে বার্ষিক ভাড়া ৪১ হাজার টাকায় একটি গুদাম লিজ দিয়েছেন। মুখপাত্র বলেন, তালিকায় সাবেক প্রেসিডেন্টের সকল সম্পত্তির পুরো হিসাব দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ৩২ নম্বর বাড়িতে যা পাওয়া গেছে তারই হিসাব দেওয়া রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্টের দেশে ও বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির উপর তদন্ত অব্যাহত আছে বলে মুখপাত্র জানান।’ কি অ™ভুত অপপ্রচার! কি সীমাহীন ঔদ্ধত্য জাতির জনকের পরিবারকে নিয়ে। যে মানুষটি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন, যে মানুষটি গণভবন ফেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের অতি সাধারণ একটি বাড়িতে বসবাস করতেন সেই মানুষটিকে নিয়ে কি সীমাহীন মিথ্যাচার ১৫ আগস্ট পারবর্তী গণমাধ্যমে। যে মানুষটির হাতে গোটা বাংলাদেশ সেই জাতির জনকের বাসগৃহে সামান্য যে অর্থ পাওয়া গেল তাকে নিয়ে কি অপপ্রচার। আর অস্ত্র নিয়ে কি নিদারূণ মিথ্যাচার! মোশতাকের পররাষ্ট্র দফতরের ওই কর্মকর্তার বরাত দিতে পাওয়া তথ্য সত্য হলে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িটি ছিল একটি অস্ত্রাগার! কি সীমাহীন নির্লজ্জ মিথ্যাচার। ১৫ সালের আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ পাঠ করলে আমাদের এ রকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। যাতে জানা যায় কতটা নিষ্ঠুর, কতটা কুচক্রী আর কতটা ভয়াবহ ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন ১৯৭৫ সালে ঘাতক চক্রের সদস্যরা। ধিক্! তাদের প্রতি যারা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতিকজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে। শ্রদ্ধা জনকের প্রতি।
লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান