আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা যে চার শত্র”র হাতে বন্দি
র”হিন হোসেন প্রিন্স
নির্বাচন কমিশনের অন্যতম একটা প্রধান করণীয় হচ্ছেÑ নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা। তার আগে নির্বাচন ব্যবস্থার একটা সংস্কার করা দরকার। সেটি আমি মনে করি। সেই সংস্কারের লক্ষ্যে যদি নির্বাচন কমিশন পরামর্শ গ্রহণের জন্য এ ধরনের সংলাপ করেন, তাহলে এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। এটা দেখার বিষয় হচ্ছে যে পরামর্শ আমাদের নাগরিক সমাজ দিলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা যে পরামর্শ দিবেন, এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যখন নির্বাচন কমিশন বসবেন তারা যেটা পরামর্শ দেবেন এর মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষের যে আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে, সেই আকাক্সক্ষা নিয়ে কমিশন কাজ করবেন কিনা? সেটা দেখার বিষয়।
আমি উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি ইতোমধ্যে নাগরিক সমাজের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যে সংলাপ হয়েছে, আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে যতটুকু জানলাম, ইতোপূর্বে আমরা অনেক রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে দেখছি যে অনেক বিষয়ে মতের মিল রয়েছে। আমরা দেখতে চাই নির্বাচন কমিশন এগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এখন নির্বাচন কমিশন এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কিনা, এটা বুঝব কিভাবে?
আমার কাছে মনে হয় সেটা বুঝার একটা পথ আছে। সেই পথটা হচ্ছে, এসব আলোচনা শোনার পরে নির্বাচন কমিশন নিজেই একটা প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। যে প্রস্তাবনা তৈরি করে সরকারে কাছে উপস্থাপন করবেন এবং সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। সেই প্রস্তাবের মধ্যে যদি আমরা দেখি জনগণের মতের প্রতিফলন আছে। তাহলেই আমরা মনে করব তারা (নির্বাচন কমিশন) একটা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে। আমি আশা করব, নির্বাচন কমিশন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেই উদ্যোগের একটা পজেটিভ প্রতিফলন আমরা দেখতে পাব। আমরা তো অনেকদিন ধরেই বলছি, এমনকি মাননীয় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলার সময় আমরা বলেছি তার একটা প্রধান বিষয় হচ্ছেÑ আমরা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চাই পার্লামেন্টে। আমরা বলেছি ‘না’ ভোটের প্রবর্তন করতে হবে। আমরা বলেছি উন্নততর গণতন্ত্রের জন্য একজন নির্বাচিত হওয়া পরে তিনি পার্লামেন্টে পাঁচ বছরের জন্যে থাকবেন এমন না। এর মাঝে যদি ভোটাররা মনে করেন তিনি দায়িত্ব পালন করছেন না। তখন তারা আবেদন করে ওই প্রার্থী প্রত্যাহারের কথা বলতে পারবেন এবং পূর্ণ নির্বাচন দাবি করতে পারবেন। যেটাকে বলা হয় ‘রি-কল সিস্টেম’।
আর প্রধান কথা হচ্ছেÑ আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা যে চার শত্র”র হাতে বন্দিÑ এক. টাকার খেলা, দুই. পেশীশক্তি, তিন. সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক প্রচার প্রচারণা, চার. প্রশাসনিক কারসাজি। এর থেকে মুক্ত করার জন্যেই নির্বাচন কমিশনকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে। তার জন্য প্রত্যেকটা বিষয়ের সুনির্দিষ্ট করণীয় আছে। আমি আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজগুলো করবেন। এই ধরনের কাজ করলেই দেখা যাবে যে তারা একটা পজেটিভ ভূমিকা নিচ্ছে। আর অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের এখন যতটুকু অধিকার আছে সেই অধিকার তারা প্রয়োগ করবেন। আমরা আশা করব, নিজেদের উপর সেন্সরশিপ আরোপ করবেন না। এছাড়া নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে সরকার তাদের কাজে প্রতিবন্ধক তাহলে জনগণের কাছে তাদের কথা বলতে হবে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য আমাদের যেটা করণীয় আছে সেটা আমরা করব।
পরিচিতি: সম্পাদক, সিপিবি, কেন্দ্রীয় কমিটি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান