বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি
হায়দার আকবর খান রনো
ঐতিহাসিক পুর”ষ যারা, একেকটা পটভূমিতে তাদের বিশেষ একটা ভূমিকা থাকে। বঙ্গবন্ধু সেই ভূমিকা পালন করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনাটা ছিল পরিকল্পিত। তাকে আমরা হারিয়েছি ১৫ আগস্টের কালো রাতে। এটা ছিল আমাদের জন্য অনেক অপূরণীয় ক্ষতি। তার অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে দেশ পেছনের দিকে যাত্রার সূচনা হয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল তখন অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দিক থেকে। সেইটাকে খণ্ডন করে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। অসাম্প্রদায়িকতা খুবই গুর”ত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তখন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই দেশ উল্টোপথে যাওয়া শুর” করল। বঙ্গবন্ধুর তৈরি যে সংবিধান, সেখানে ধর্মীয় দলগুলোর কোনো অস্তিত্ব ছিল না, থাকতে পারে না। নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান এসে জামায়াত ও মুসলিম লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন। তাদের কিছু কিছু লোককে দলের মধ্যে টেনে নিলেন। এই যে উল্টোপথে যাত্রা শুর” হলো, সেটা এখনো চলছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়। তার হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ অধঃপতনের দিকে যাত্রা শুর” করেছিল।
আমার মতে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। যেমন বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, এখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষ থাকল কী? থাকল না। বঙ্গবন্ধুর সময় সংবিধানে ধারা ছিল যে, কোনো ধর্মীয় দল থাকতে পারবে না। এখন তো জামায়াতে ইসলামসহ সবই আছে। শেখ হাসিনার সরকার অবশ্য একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নেতাদের বিচার করেছেন। এজন্য শেখ হাসিনা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তাকে আমরা এজন্য প্রশংসা করি। সাধুবাদ জানাই। আমি জানি না কেউ আমার সঙ্গে দ্বিমত করবেন কিনা, তবে আমার মতে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ যথেষ্ট আছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। মানুষ তাদের প্রাপ্য দিচ্ছে। মানুষের দেওয়া সমর্থনের মর্যাদা রাখা উচিত তাদের।
পরিচিতি: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সিপিবি
মতামত গ্রহণ: সাইফুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ