‘ওয়েজবোর্ডের প্রয়োজন নেই, বোগাস সংবাদপত্র বন্ধ করা হবে’
হাসান আরিফ : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে বেতন বেশি হওয়ায় সাংবাদিকদের জন্য আর কোনো ওয়েজ বোর্ডের দরকারই নেই। মূলত ওয়েজ বোর্ডেরই দরকার নেই। তাদের বেতন প্রতিযোগিতামূলক ভাবে নির্ধারণ হবে। আর ভাল ১০ থেকে ১৫টা পত্রিকা ছাড়া বাকি প্রত্রিকা সরকার বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
নতুন বেতন কাঠামোর দাবিতে সংবাদকর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে গতকাল সচিবালয়ে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু পাশে থাকলেও সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি। তিনি সব ধরণের প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড আননেসেসারি, টোটালি আননেসেসারি। বিকজ ইয়োরস স্যালারি স্কেলস আর বেটার দ্যান গভর্নমেন্ট স্যালারি স্কেলস (সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড অপ্রয়োজনীয়, পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। কারণ বর্তমানে আপনাদের বেতন কাঠামো সরকারি বেতন কাঠামোর চেয়ে বেশি)।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সরকারি চাকুরিজীবিদের পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড পাওয়ার বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে বলা হয় তাহলে সাংবাদিকদের জন্য কেনো ওয়েজবোর্ড দেওয়া হবে না? এর উত্তরে তিনি বলেন, হা, প্রভিডেন্ট ফান্ড আপনাদের জন্যও করা যায়। তবে আপনাদের পাঁচটি বেতন গ্রেড আছে।
এ সময় সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করে একজন শিক্ষানবিস সাংবাদিক মাত্র ৮ হাজার টাকায় টেলিভিশনে কাজ করেন। জবাবে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। আর মাস্টার্স পাস করা আমাদেরও পিয়ন আছে।
এ সময় অর্থমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা বলেন, আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশন ওয়েজবোর্ডের আওতায় নয়, এখানে কোনও বেতন কাঠামো নেই। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এই বক্তব্য ঠিক নয়। সব সমান। সবার জন্যই ওয়েজবোর্ড আছে। তখন সাংবাদিকরা বলেন, ‘স্যার আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নোয়াব নেতারা অর্থমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোর যে ৫টি ধাপ দেখিয়েছেন, সেখানে সর্বনিম্ন বেতন দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০টাকা। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি দেখেছি, আপনাদের সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো আর সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন স্কেলও প্রায় সমান।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, পত্রিকার মালিকরা আপনাকে ভুল বুঝিয়েছে, বলার পর তিনি বলেন, আপনারা একজন বা দুজন দায়িত্ব নেন, আপনাদের স্যালারি গ্রেড আমাকে দেন।
সাংবাদিকদের সর্বশেষ বেতন কাঠামো হয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ার পর সংবাদকর্মীদের আন্দোলনে নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব তাদের প্রতিনিধির নাম না দেওয়ায় বোর্ড গঠন করা যাচ্ছে না বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
টেলিভিশনে ওয়েজ বোর্ড নেই, আর সব পত্রিকায়ও ওয়েজ বোর্ড কার্যকর নেই- এটা জানানোর পর পাল্টা প্রশ্নে মুহিত জানতে চান, ঢাকায় কয়টি দৈনিক পত্রিকা আছে?
তথ্যমন্ত্রীসহ একাধিক সাংবাদিক উত্তরে ২০১টি বললে, মুহিত চেঁচিয়ে বলেন, রাবিশ, ইটস মাই আনসার টু ইউ। রাবিশ। ২০১? এসব পত্রিকায় কোনও সাংবাদিক নেই। এসব পত্রিকা বিনা শুল্কে কাগজ তোলে, সরকারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন নেয়। এসব পত্রিকার জন্য ওয়েজবোর্ড দেবো?
তখন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অনেকেই বলেন, এসব পত্রিকার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এখানে সাংবাদিকদের দোষ কোথায়? যেহেতু সরকার অনুমোদন দিয়েছে তাই সরকারেরই দায়িত্ব ওয়েজ নিশ্চিত করা।
এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার এখন এই সব বোগাস পত্রিকাগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিবে। এসব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মুহিত এরপর বলেন, ১৫টি হবে কি না আমার সন্দেহ আছে। এই যে সারা দেশে দৈনিক পাঁচশ কতটা কী আছে খবরের কাগজ, অল বোগাস, ওদের জন্য বেতন স্কেল ঠিক করব? নো, নট অ্যাটঅল। আই উয়িল ফিক্সড দি বেতন স্কেল ফর দিস ফিফটিন অর টুয়েন্টি নিউজ পেপারস, যেখানে মানুষজন কাজ করে এবং এগুলোতে কি স্যালারি স্কেল আছে আমাকে একটা দ্যান।
চিৎকার করে কথা বলার সময় অর্থমন্ত্রীর শরীর কাঁপছিল। তাকে থামানোর উদ্যোগ নেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
মুহিতের ঘাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে ইনু বলেন, স্যার ঠিক আছে।
এক পর্যায়ে মুহিত বলেন, আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের ধারণা হল, সাংবাদিকদের জন্য কোনো ওয়েজবোর্ডের প্রয়োজন নেই।
সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীকে বলেন, আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আপনি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বসুন। এ সময় তিনি বলেন, আপনাদের এত সংগঠন, আমি কার সঙ্গে বসব। কে আপনাদের চেয়ারম্যান?
জবাবে সাংবাদিকরা বলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এই সংগঠনের নেতাদের সাথে বসলেই হবে। তারাই আপনাকে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবেন। সাংবাদিকদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, দেখি, আমি বসবো।
নোয়াবের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই মিটিংয়ে আমরা তাদের কথা শুনেছি। কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা সরকারের লোকজনের সঙ্গে পরে বসব। তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নোয়াবের সভাপতি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মর্তুজা আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ডিএফপির মহাপরিচালক ইসতাক আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী তার অফিস রুমে যাওয়ার কিছু সময় পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা এসে সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১৭ তারিখ অর্থ মন্ত্রী সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বসবেন। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন