টোটালি রাবিশ!
অজয় দাশগুপ্ত
কথাটা আমাদের না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী সুযোগ পেলেই দুটো শব্দ ব্যবহার করেন, এক. বোগাস, দুই. রাবিশ। যার আভিধানিক অর্থ আমাদের জানা। সাধারণত উচ্চপদে আসীন মানুষেরা মন্তব্য করতেন সচেতনভাবে। তাদের কথার দাম লাখ টাকা বলে প্রচলিত বাক্যটি এখন অচল। বিশেষত যেসব মন্ত্রীরা কথা দিয়ে মানুষের বিরক্তি বাড়াচ্ছেন ইনি তাদের শিরোমণি। একটা কথা বলে শুরু করি, সংস্কৃত উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় ভাষা। সেখানে পরিষ্কার বলা আছে, এক বয়সের পর বাণপ্রস্থে যাওয়ার কথা। মানে সংসার ও সমাজের বিষয় বাসনা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে নিজের সামাজিক জীবনযাপন। আমাদের আবুল আল আবদুল মুহিত এমন যোগ্য যে সে বয়সের ডাবল বয়স পাড়ি দেওয়ার পরও তার মন্ত্রীত্ব আছে। এখন তিনি কাজে যাই হন কথায় বেসামাল। আর সে বেসামালের সর্বশেষ শিকার সাংবাদিকেরা।
একটা ওয়েজবোর্ড বা একটা বিধিমালা কি তাদের প্রাপ্য নয়? মাননীয় অর্থমন্ত্রী কি জানেন না যে কাগজগুলো তাকে হাইলাইট করে, তার খবর, তার ছবি ছাপে তাদের ভেতরের হাল কি? যদি না জানেন তো মুখ বন্ধ রাখাই কি যৌক্তিক না? ঢাকায় কাগজের সংখ্যা বেশি সেটা যদি তিনি জানেন তো কেন জানেন না তাদের দলের কতগুলো শাখা উপশাখা? নামে-বেনামে তাদের দলের যদি এতগুলো শাখা থাকতে পারে, এতগুলো ব্যাংক থাকতে পারে, এত এত বীমা কোম্পানি, এত ফোন কোম্পানি থাকতে পারলে পত্রিকা বা টিভি থাকতে পারবে না? তাছাড়া এগুলো কি হাউসিং বা কোচিং সেন্টার কিংবা জীবন বাঁচানো ঔষধ কোম্পানির মতো হায় হায় কোম্পানির কিছু? এগুলো অনুমোদন নিয়েই বাজারে আছে।
মুশকিল হলো তিনি নিজেই বলছেন অনেক কিছু জানেন না। এই না জানাটা তখনই মধুর হতো যদি তিনি এভাবে ঝাঁপিয়ে না পড়তেন। তার নলেজে নেই ঢাকার প্রতিষ্ঠিত কাগজের বা টিভির অনেক সাংবাদিক বাসা ভাড়া দিতে পারেন না। অনেকে তিনমাসের বেতন পায় না। কারও কারও বছরে দু-একবার বেতন হয়। এমনও আছেন তারা জীবন পার করে দিয়েও অর্ধবেতনভূক। সবাই সাংবাদিকতা দিয়ে টাকা কামায় না। অবৈধ অর্থ উপার্জন করে না। মুষ্টিমেয় অসাধু সব পেশায় থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কারিগররা ভালো নেই। একদিকে সরকারের ডিজিটাল স্বপ্ন আর টাকা উপচে পড়ার গল্প, আরেকদিকে তাদের শোচনীয় বাস্তবতা। সেখানে তাদেরকে ভরসা দেওয়ার পরিবর্তে এমন ভর্ৎসনা মনে করিয়ে দেয় সাহায্যের দরকার নেই, জবান সামলান স্যার।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনি যখন তাদের ভর্ৎসনা করছিলেন তখন নাকি আপনার শরীর কাঁপছিল রাগে। ভিডিওতে তাই দেখা যায়। কেন এই রাগ? আর যদি তা থাকেই তবে ব্যাংক লুট, রিজার্ভ লুট, শেয়ারবাজার লুটের সময় কোথায় ছিল এই রাগ? তাদের বেলায় বোগাস বলে উড়িয়ে দিয়ে এদের বেলায় রাগের কারণ কি? তারা তো লুটের না। তারা সরকারি বোর্ড চেয়েছে। পারলে দেবেন, না পারলে না বলবেন। এত রাগ এতভাবে অপমানের মানে কি? কে না জানে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে এখনো বাকশালের দুর্নাম আছে। পত্রিকা বন্ধের বদনাম আছে। এই যে আপনি বললেন অল্প কয়েকটা ছাড়া বাকিগুলোর ভাগ্য কি হবে ভেবে দেখবেন, এটা তো সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। না দিলেও দুশমনরা সেদিকে নিয়ে যাবে ঘটনাকে। এতে কি সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল বা শক্ত হবে। না সাংবাদিকদের মনের আগুনে সবকিছু দাউ দাউ করে জ্বলার পথ খুলে দেবে?
সেই গল্পটা আবার বলি। কিবরিয়া সাহেবের মৃত্যুর পর জানাজা শেষে উৎসাহী তরুণ-তরুণীরা প্রশ্ন করেছিলÑ কে হবেন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী? বয়স্কজনেরা বলেছিল মুহিত সাহেব। তারুণ্য জানতে চেয়েছিল তার তো বয়স হয়েছে, না হয় একবার হলেন তারপর? কটমট করে তাকানো নেতাদের চোখ দেখে ভয়ে আর মুখ খোলেনি কেউ। সেই আপনি এখনো বহাল। আর আপনি ভুলে যাচ্ছেন সময় বদলায়। জীবন বদলায়। গদি বদলায়। কিছু কথা বদলায় না। যেমনÑ অসির চেয়ে মসী বড়। টোটালি রাবিশই বটে।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান