উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দশকের কৌশলগত ধৈর্য্যরে অবসান
লিহান লিমা: জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচীতে প্রায় দুই দশক ধরে বজায় রাখা মার্কিন কৌশলগত ধৈর্য’র অবসান হতে চলেছে। মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘উত্তর কেরিয়া জ্বলবে,যে আগুন বিশ্ব আর কখনোই দেখেনি।
পরমাণু বিজ্ঞানীদের বুলেটিনের প্রধান সম্পাদক জন ম্যাক্লেন এই প্রসঙ্গে হাফিংটন পোস্টকে বলেন, আমার জানা-শোনা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সিদ্ধান্তের মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য সবাইতে ভয়ঙ্কর ও বোকামি। উত্তর কোরিয়াকে ট্রাম্পের হুমকি পুরোপুরি ভুল ও বেপরোয়া। বুধবার আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে (ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন তার কূটনৈতিক সফর শেষ করেন। উত্তর কোরিয়া এই সফরে মার্কিন এজেন্ডা প্রত্যাখান করে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো ছিল তার এই সফরের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু টিলারসনের আসিয়ান সফর এই অঞ্চলে ট্রাম্প টিমের গুরুত্ব খুব কমই উপলদ্ধি করাতে পেরেছে। কারণ তাদের কাছে দক্ষিণ চীন সাগরের চাইতে ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকার বেশি না। এর আগে ওবামা প্রশাসন এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব হ্রাস করতে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ট্রান্স-প্যাসিফিক সহযোগিতামূলক বাণিজ্য চুক্তি করে। কিন্তু ট্রাম্প এসেই সেটি বাতিল করেনও এর বিপরীতে সম্পর্ক জোরদারে আর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি।
রোববার ম্যানিলাতে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে টিলারসনের বৈঠকে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, দক্ষিণ চীন সাগরের নিরাপত্তা ও কেরিয়া দ্বীপ নিয়ে উদ্বিগ্নতা ব্যক্ত করা হয়েছে। যদিও জুলাইতে কোরিয়া দুইটি আন্ত-মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেও এটি নিয়ে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মত বিনিময় করতে দেখা যায় নি, যতটা না তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বিগ্নতার কারণ হল এই ক্ষেপণাস্ত্র পরিক্ষা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে চালানো হয়েছে। যেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করা যায়। তবে পিয়ংইয়ংয়ের সমস্যা মোকাবেলায় ট্রাম্পকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্তের মোকাবেলা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই অবস্থানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বিষয়টি নিয়ে আরো চিন্তা করা উচিত। কারণ পিয়ংইয়ংয়েরও পারমাণবিক সক্ষমতা আছে। এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, পিয়ংইয়ং খুবই ভয়ঙ্কর আচরণ করছে এবং এটি খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ করা হবে। তবে ওয়াশিংটনের পরবর্তী পদক্ষেপ কি সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, বাহিরে থেকে এটিই স্পষ্ট দুই দশকের কৌশলগত সহনীয়তার রাস্তা থেকে বের হয়ে এসেছে মার্কিন নীতি। পিয়ংইয়ংয়েরও আর আলোচনার টেবিলে বসে সমাধানের পথ থাকছে না। সামরিক সরঞ্জামের পাশাপাশি কোরিয়ার জাহাজের মত পণ্য ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা ছিল উত্তর কোরিয়ার আয়ের মূল উৎস। ওয়াশিংটন তাদের পাশে টোকিও ও সিউলকে পেলেও বেইজিংকে পুরোপুরি নিজেদের কবজায় আনতে কাজ করছে। ফেব্রুয়ারিতে বেইজিং উত্তর কেরিয়া থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে। তবে বেইজিং কিছুটা মধ্যপন্থী থাকার চেষ্টা করছে। প্রথমত, উত্তর কেরিয়ায় কমিউনিস্ট শাসকের পতন হলে চীনের কমিউনিস্ট দলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট