রায় নিয়ে রাজনীতি করবেন না, আমরা কারও ফাঁদে পড়বো না
প্রধান বিচারপতি
এস এম নূর মোহাম্মদ : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেছেন, রায় নিয়ে রাজনীতি করবেন না। আমরা কারও ফাঁদে পা দেব না। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন আপিল বিভাগের নজরে আনলে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি একথা বলেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন দেখিয়ে আদালতে বলেন, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি। তিনি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে বলেছেন, ওই রায় পূর্বধারণা প্রসূত। জনগণের নয়, বিচারকের প্রজাতন্ত্রে আছি বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য তার ওই বক্তব্য বিবেচনায় নিন।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। আপনারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বলছেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এর গঠনমূলক সমালোচনা করা যায়। সেই গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা গ্রহণ করি। বার সভাপতি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায় ও বিচারকদের নিয়ে যে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে তা গুরুতর আদালত অবমাননাকর। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলব আপনারা (সরকার ও বিরোধীপক্ষের আইনজীবী) বিচার বিভাগকে রক্ষা করুন। কোনো পক্ষ বিচার বিভাগে রাজনীতি টেনে আনবেন না। আমরা ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে যে রায় দিয়েছি তা ইতিহাস বিচার করবে। আমরা কোনো প্রতিবাদ দেব না।
এসময় পেছনের সারিতে বসা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে বলেন, বারে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে তাদের বক্তব্য বারের বক্তব্য হতে পারে না। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, এরা তো সকলেই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সচেতন, আমরা দেখছি।
তবে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিচার বিভাগকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি অনুরোধ করব, আপনারা সংযত আচরণ করুন। আমরা কারও ট্র্যাপে (ফাঁদ) পড়ব না। আমরা সচেতন। আপিল বিভাগের সাতজন বিচারক চিন্তা-ভাবনা করে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছেন। রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না।
এ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কোর্টকে স্ক্যান্ডালাইজ করার কারণেই মাহমুদুর রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট ও বিচারকদের কেউ স্ক্যান্ডালাইজ করলে তা হবে আদালত অবমাননাকর। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, মাহমুদুর রহমান তার পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘চেম্বার জজ মানে স্টে’। ওই প্রতিবেদনটি ছিল আদালত অবমাননাকর। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রায় দিয়েছি তার প্রতি আমরা অটল রয়েছি। এখানে বারের সভাপতি আছেন। আপনাদের বলছি এই রায় নিয়ে সংযত আচরণ করুন। যাতে এটি নিয়ে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, বার এ বিষয়ে কোনো রেজ্যুলেশন গ্রহণ করেনি। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, কোর্টের ডেকোরাম বজায় রেখে চলবেন। আমি তো তাদের বক্তব্যের জবাব দিচ্ছি। আপনি কেন দাঁড়িয়েছেন?
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। কারণ তিনি বলেছেনÑ রায় ছিল পূর্বধারণাপ্রসূত। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও যদি রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা করেন তাহলে আমরা সেটিকে গ্রহণ করব। পরে বার সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, অর্থমন্ত্রী রায় নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, তাও আদালতের নজরে আনিনি। কিন্তু একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি আইন কমিশনের দায়িত্বশীল পদে আছেন। তিনি কি এভাবে রায়ের সমালোচনা করতে পারেন? প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, আমরা সচেতন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী