সালমানের শাহর রুমে ধস্তাধস্তি ও দরজায় দায়ের কোপ ছিল : ফেসবুক লাইভে ভাই শাহরান
আনোয়ারুল করিম : সালমানকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সালমান শাহর ছোট ভাই শাহরান। গতকাল শুক্রবার সকালে মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা বলেন শাহরান। শাহরান বলেন, সামিরাকে ‘কিস’ করার জন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সালমান প্রকাশ্যে সোনারগাঁও হোটেলে চড় মেরেছিল। এই বিষয়টা সবাই জানে। তিনি বলেন, সালমান শাহ হত্যার পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
শাহরান বলেন, আমার ভাইকে আমি চিনি, আমার সঙ্গে সে অনেক ঘনিষ্ঠ ছিল। যদি তার মনে এ রকম কোনো চিন্তা থাকত তাহলে অবশ্যই আমার সঙ্গে শেয়ার করত। আমরা একই বিছানায় ঘুমাতাম। দাফনের আগে আমি তাকে গোসল করিয়েছিলাম। তার গলায় ফাঁসির কোনো চিহ্ন ছিল না, একটা টেলিফোনের তার জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
সালমান শাহর ওজনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি সে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করে তাহলে ফ্যান একটুও বাঁকা হলো না কেন? ফ্যান তো ভেঙে পড়ার কথা। তিনি বলেন, সালমান শাহ যদি আত্মহত্যাই করে থাকে তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে কেন করল? মানুষ তো ঘুম থেকে উঠে এ রকম করতে পারে না, করলে রাতেই করতে পারত।
সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে শাহরান বলেন, যদি সালমান শাহ আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে তার রুমের দরজায় কেন দায়ের কোপ থাকবে? দেয়ালে কেন ধস্তাধস্তির চিহ্ন থাকবে? আমি নিজে দেখেছি সেসব। আমার ভাই মার্লবোরো গোল্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট খেত, সেখানে অন্য ব্র্যান্ডের সিগারেটের খোসা আসল কোথা থেকে? কারা খেয়েছিল এই সিগারেট?
শাহরান বলেন, আমরা যখন সালমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই, তখন আমাদের সঙ্গে চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়। আমার বাবা-মাকে আলাদাভাবে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি পোস্টমর্টেম-এর সময় থাকতে চেয়েছিলাম, আমাকে থাকতে দেওয়া হয়নি।
শাহরান বাংলাদেশ সরকারের কাছে শালমান শাহ হত্যার বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের শাস্তি হোক, একটা ফেয়ার বিচার হোক।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। সেদিন সকাল ৭টায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। এই শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ঢাকার তৎকালীন সিনেমা জগতের সুপারস্টার সালমান শাহ। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহর বাবাকে তার ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না । নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, ‘বলেছে স্যার এখন তো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহর স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহর বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেওয়ার পর দরজা খুলল সামিরা (সালমান শাহর স্ত্রী)। উনি (সালমান শাহর বাবা ) সামিরাকে বললেন, ইমনের (সালমান শাহর ডাক নাম) সঙ্গে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বলল, আব্বা ও তো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয়নি। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসেছিল ওখানে।’
বেলা ১১টার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ওই টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত সালমান শাহর বাসার দিকে রওনা হন। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী। ‘খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেওয়ার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেওয়ার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহর স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে। আমি দেখলাম আমার ছেলের হাত পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে।’
ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ