মুজিব হত্যাকা- : মার্কিন আধিপত্যের কালো ছায়া দেখেছিলেন ভাসানী
রাহাত মিনহাজ
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের কাগমারীতে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা হামিদ খান ভাসানী। তখন বিরোধী দলীয় বা বিরোধী মোর্চার নেতা। বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা অন্য সবার মতো সেই খবর তিনি প্রথম জানতে পারেন রেডিও মারফত, মেজর ডালিমের উদ্ধত কণ্ঠে! ৩২ নম্বরের হত্যাযজ্ঞের খবর শুনে খুবই আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন ভাসানী। ইতিবাসবিদ ও ভাসানীপন্থি রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে জানা যায় এ খবর শুনে ভাসানী বলেছিলেন ‘সব শেষ হয়ে গেল’। ইতিহাসের এই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বিশেষভাবে গবেষণা করেছেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি নিজেও এই ঘটনাপ্রবাহে ভাসানীর মনোভাব ও প্রতিক্রিয়ার একজন সাক্ষী। আবুল মকসুদ বলেন, ৩২ নম্বরের হত্যাযজ্ঞের খবর শুনে মাওলানা ভাসানী ‘ডিপলি শকড্’ হন। ফরজের নামাজের পর খবরটি শুনে মওলানা সাহেব আবার মসজিদে ঢোকেন। ঘণ্টাখানেক ইবাদত করেন। এরপর মসজিদ থেকে যখন বের হন তখন তার চোখ ছিল অশ্রুসজল। ১৫ আগস্ট শুক্রবার সারাদিন কাগমারীতেই ছিলেন ভাসানী। ভারাক্রান্ত মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত ভাসানী এদিন তার রাজনৈতিক অনুচরদের সঙ্গে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ১৫ আগস্ট ভাসানী বারবারই বলেছেন মার্কিন আধিপত্যের কথা। তিনি বলেছিলেন, এবার আর মার্কিনীদের আটকান যাবে না। ওরা একাত্তরে যা পারেনি এবার তা করবে। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। চীনপন্থি ভাসানী ডানপন্থি মার্কিন আধিপত্যের শঙ্কায় ভীত আতঙ্কিত ছিলেন, ভীত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এতদিন মুজিবের জন্য ওরা কিচ্ছুই করতে পারেনি। এবার তারা সবই করবে। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘৃণ্যতম হত্যাযজ্ঞের পর মওলানা ভাসানীর একটা বিবৃতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ইত্তেফাকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন সরকারকে সমর্থন জানিয়েছেন ভাসানী। সে সময় অনেক পত্রপত্রিকায় উল্লেখ হয়েছিল এক টেলিগ্রামে ভাসানী এই বার্তা দিয়েছেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ জনান, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সে সময়ের শাসকেরা ঘৃণ্য এই অপপ্রচার চালান। এছাড়া এর কিছুদিন পর মওলানা সাহেব পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করতে যান মোশতাক ও জেনারেল ওসমানী। সে সময় ইত্তেফাকসহ সব পত্রিকায় সেই ছবি বড় করে ছাপা হয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবুল মকসুদ বলেন, মোশতাক ভাসানীর সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। অসুস্থ ভাসানীকে মোশতাক দেখতে যেতেই পারেন। তবে এই ছবি নিয়েও এক ধরনের প্রচারণা চালানো হয়। তবে এই বিষয়গুলো মোটেও সত্য নয় যে মুজিব হত্যাকে সমর্থন করে নতুন সরকারকে উষ্ণ হৃদয়ে আলিঙ্গন করেছেন তিনি। পুত্রসম মুজিবের হত্যাকাণ্ড তাকে নিদারূণ ব্যথিত করে। যা তার কাছের মানুষগুলো ঠিকই জানত। শেখ মুজিব সে সময় ভাসানীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিলেন। কিন্তু এতে ভাসানী আপ্লুত ছিলেন ব্যাপারটা মোটেও সত্য নয় বলে দাবি করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।
তবে এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় তা হলোÑ পুত্রসম মুজিবের হত্যার পর ভাসানী এর প্রতিবাদে টু শব্দটি করেননি। এটা কি যুদ্ধংদেহী খুনি চক্রের ভয়ে নাকি এর পেছনে অন্য কারণ ছিল তা গবেষণার বিষয় হতে পারে।
লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান