সোয়া কোটি কুরবানির পশু প্রস্তুত এবং কিছু কথা
রবিউল আলম
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, কুরবানির জন্য সোয়া কোটি পশু প্রস্তুত আছে দেশি কৃষকের কাছে। বিদেশের পশুর প্রয়োজন নেই কুরবানির জন্য। এটি একটি আনন্দের সংবাদ। বিগত তিনটি কুরবানির ঈদের পশুর চাহিদা পূরণে সক্ষম ছিল বাংলাদেশের কৃষকরা। বাংলাদেশ পশু পালনে লাভজনক হওয়া, অনেক যুবক শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি বড় বড় কোম্পানি, গরিব কৃষকেরা সমবায়, এনজিও, সরকারের পশুপালন নীতি অনুসরণ ও গ্রহণ করে এগিয়ে চলছে পশুপালনে। দেশ স্বনির্ভর হবে, বেকারত্ব দূর হবে, অর্থনীতির উন্নয়ন হবে, কৃষক সাবলম্বী হলে দেশ এগিয়ে যাবে। ভারতের গো-রক্ষা কমিটির আন্দোলন, গরু পাচারের কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যাবে। এত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। শত সফলতার মাঝেও কিছু বাধা আছে পশু পালনে, তা নিরসন করতে পারলে ৬০ হাজার কোটি টাকা পশু আমদানি (পাচার) প্রতিরোধ করা যাবে। পশুর চামড়া, বর্জ্য (অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ) রপ্তানি করে দেশের এক নম্বর রপ্তানিজাত পণ্য হিসেবে স্থান পাবে। পশুপালনে বাধাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। আমার অনেক লেখায় উল্লেখ করতে হয়েছে ১. গরুর হাটের অতিরিক্ত খাজনা পশুপালন উন্নয়নে বড় বাধা, শতকরা ৫ টাকা খাজনা দিয়ে কৃষক পশুপালন উন্নয়ন করতে পারবে না, একটি গরুর ৪/৫ হাজার টাকা খাজনা হতে পারে না। ২. আমরা যেমন সোয়া কোটি পশু নিয়ে বসে আছি কুরবানির আশায়, ঠিক তেমনি ভারতের পাঁচটি প্রদেশও পশুপালন করে থাকে বাংলাদেশে পাচারের আশায়। বিগত তিনটি কুরবানির ঈদ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভারতীয় পশুর অবাধে প্রবেশাধিকার আমাদের কৃষকগণ ধ্বংস করে দিয়েছে, পশুপালন উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আমার অনেক লেখায় উল্লেখ করেছিÑ আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজু, পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্থান আছে গরু-মহিষ পালন তাদের একমাত্র পেশা এবং তাদের পশুগুলো বাংলাদেশে পাচার না করতে পারলে তাদের আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাচারের মহাপরিকল্পনা করা হয়। গো-রক্ষা নামে যা করা হচ্ছে তা হলো লোক দেখানো, পাচারকারীদের কমিশন বাড়ানোর জন্য। একটি বিষয় উল্লেখ করলে পাঠকদের বুঝতে কষ্ট হবে না, গরু পাচারের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের কমিশন ছিল আগে ১ হাজার টাকা, সেই কমিশন বাড়তে বাড়তে এখন ৩৫/৪০ হাজার টাকা গরু প্রতি, অজুহাত হিসেবে তারা বলছে গো-রক্ষা কমিটিকে ম্যানেজ করতে টাকা লাগে।
বাংলাদেশের বিশাল এই কুরবানির বাজার রক্ষা করে আমাদের কৃষকের মাঝে ফিরিয়ে দিতে পারি, বিদেশি পশু দেশে প্রবেশাধিকার না দিয়ে। তবেই আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে, দেশের টাকা দেশেই থাকবে, কৃষক লাভবান হবে, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়ে যাবে, গো-রক্ষা কমিটির নামে অর্থ আদায় বন্ধ হবে এবং রপ্তানিতে প্রাণ ফিরে আসবে। সরকারের কাছে আবেদন করছি সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে হবে, কোনো অবস্থায় আমাদের পশুপালন উন্নয়নে কৃষককে পশু পাচার করে ধ্বংস করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিগত তিনটি কুরবানি ঈদে আমাদের কৃষকগণ চোখের পানি মুছতে মুছতে গরুর হাট থেকে বাড়ি ফিরে গেছে। অনেকের দেনার দায়ে বসত-বাড়ি হারাতে হয়েছে। গরু হাটের চাঁদাবাজি, অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ করতে পুলিশ ও র্যাবকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। প্রয়োজনে ইজারার শর্ত দেখে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান