নির্বাচন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বিএনপির
ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। দলের সদস্য হিসাবে দলীয় সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই এবং আমরা দলের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য। কিন্তু আমার কাছে যদি ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতাম। আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, নির্বাচনে পট-পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছিল। তিনটি কারণ উল্লেখ করতে চাই। প্রথমত, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই নির্বাচনের আগে এলাকা ছেড়েছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতারাও দেশত্যাগের আগেই তাদের স্ত্রী-সন্তানকে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, সরকারের কর্মকর্তারা অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থানে চলে আসছিল। তৃতীয়ত, বিএনপির নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত ছিল।
ফলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাদের এই শক্তিটা চলে যায় আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের হামলা-মামলা ঠেকাতে। বিএনপির যুক্তি ছিল যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এই ইস্যুটি আরও যুক্তিপূর্ণ এবং জোরাল হতো। আমরা জাতীয় নির্বাচন বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলাম। সেখানে গিয়ে আমরা প্রমাণ করলাম যে, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, জাতীয় নির্বাচনে গেলে আমাদের দাবিটা আরও গুরুত্ব সহকারে ফুটে উঠত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মেকানিজম করার চেষ্টা করবে। তারা যখন দেখবে, তাদের পরিকল্পনায় কাজ হচ্ছে না, তখন তারা হয়তো-বা কোনো ইস্যু বা ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচন তা ভন্ডুল করার চেষ্টা করবে। আমার মতে, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে শতাধিক সংসদীয় আসন পেয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলে থেকে জনদাবিগুলো তুলে ধরতে পারত। তখন এত মামলার আসামীও তাদের হতে হতো না। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বরং সারাবিশ্ব তাকিয়ে থাকবে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কতটুকু কারচুপি করবে, বলা মুশকিল।
বিএনপি এখন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে যে অবস্থান গ্রহণ করেছে, সেটা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। কেননা, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অবশ্যই নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার প্রয়োজন। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় বরং বিশ্বের যেখানেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেই একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকে। সহায়ক সরকারের কথা বলুন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা, যাই বলুন না কেন, তফসিল ঘোষণা করার পরে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হয়। নির্বাচনের সময় পার্লামেন্ট যদি বহাল থাকে, তাহলে একজন সংসদ সদস্য এবং একজন সাধারণ মানুষ পরস্পর প্রতিদ্বন্ধী হয়ে কিভাবে নির্বাচন করবে? এটা নির্বাচনী আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা এক ধরনের বৈষম্য। সেজন্যই জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হয় এবং ফলে সেখানে সহায়ক সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যবস্থা থাকতে হয়।
ফলে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সাংবিধানিক অধিকার বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন সবার নিকট গ্রহণযোগ্য একটি স্ষ্ঠুু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি সহায়ক সরকার। যে সরকারের কাজ হলো দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং জনগণ যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করা।
পরিচিতি: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ