তরুণদের ইয়াবা আসক্তি এবং পারিবারিক শিক্ষা
ডা. জিল্লুর কামাল
ইয়াবার প্রতি তরুণদের আসক্তির কারণ সম্পর্কে বলার আগে আমি একটা ঘটনা বলতে চাই। কিছুদিন আগে আমি একজন রোগীকে দেখেছিলাম, আমেরিকায় সে হেরোইন সেবন করত। কয়েকবার মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকার পর বাংলাদেশে এসেছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা শিক্ষিত, এতকিছু জানো তাহলে তোমাদের ওখানে কিভাবে এই নেশার বিস্তার ঘটেছে? ছেলেটা আমাকে বলল যে, ‘অল করাপটেড’। পুলিশ, মেয়র, স্থানীয় বাসিন্দা সবাই করাপটেড। এ ধরনের জিনিস বিক্রি করে যে টাকাটা তারা আয় করে, সেটা আবার তারা ভাগাভাগি করে নেয়। আমাদের দেশের চিত্রটাও কিন্তু ভিন্ন নয়। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। আমি এমনও পুলিশ দেখেছি, যারা ইয়াবা চালান ধরে আবার ছেড়ে দিচ্ছে। আবার সেই ইয়াবা আটক করে তারাই মাদক বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে টাকা নিচ্ছে। আমার মনে হয়, এটা একটা ব্যবসা এবং এতে প্রচুর লাভ। এটার পুরোটাই একটা বাণিজ্য। এখন এতে যদি তরুণ সমাজ আকৃষ্ট না হয়ে অন্য কোনো লেভেলের কেউ আসক্ত হয়, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। তরুণেরা এই নেশায় আসক্ত হওয়ার কারণটা খুব স্বাভাবিক। কারণ, তরুণ বয়সটাই হচ্ছে অ্যাডভেঞ্চারের বয়স, এক্সপেরিমেন্টের বয়স। এক্সপেরিমেন্টের ঝোঁক আছে তাদের মধ্যে, ঝুঁকি নেওয়ার সাহসও আছে। যখন তাদের সার্কেলের কোনো বন্ধু এটা খাচ্ছে, তা থেকে আরও তরুণেরা আগ্রহ পাচ্ছে।
তরুণেরা নেশায় বেশি আসক্ত হয়, কারণ এই বয়সটাই হচ্ছে যেকোনো বিষয়ে আগ্রহের সঙ্গে এক্সপেরিমেন্ট করার। তাদের সেই সাহসও আছে। তরুণেরা ইয়াবাতে আসক্তির আরেকটা কারণ, ইয়াবার সহজলভ্যতা। যেকোনো নেশার একটা বড় কারণ হচ্ছে সহজলভ্যতা। যে জিনিসটা সহজেই পাওয়া যায়, তারা সেটা নেবে। ইয়াবার প্রচলন এখানে ছিল না। সহজলভ্যও ছিল না, তখন এর প্রতি আসক্তিটাও কম ছিল। এখন সহজেই ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে, ফলে তরুণরা আসক্ত হয়ে পড়ছে। এই নেশার উপকরণ বেশ কয়েক বছর আগেও ছিল না।
তরুণদের ইয়াবার কালো থাবা থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে দরকার লেখাপড়া, খেলাধুলা করা, জীবনে বড় কিছু করার বা সেই আশার জায়গাটা তৈরি করা। নেশা করার মাধ্যমে কোনো কিছু অর্জন হয় না, এটা তরুণদের বুঝতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে। অনেকেই মনে করে, ইয়াবা খেয়ে রাত জেগে পড়াশোনা করে ভাল রেজাল্ট করা যায়। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। নেশা করে কখনো পড়ালেখা করা যায় না। পিতা-মাতার পক্ষ থেকেও বলতে হবে, সামাজের পক্ষ থেকেও বলতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে নেশার নেতিবাচক দিক। সন্তানদের প্রতি ভালবাসা থাকা যেমন দরকার, তেমনি খেয়াল রাখতে হবে যে, তারা কোথায় যায়, কি করে? পিতা-মাতার একটা নৈতিকতার জায়গা থাকতে হবে। আমি ধর্মীয় মনোভাবের কথা বলছি না। কারণ, আমি ধর্ম পালন না করেও নৈতিকতা অবলম্বন করতে পারি। সেদিক থেকে অমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সততার চর্চাটি হয়। আমরা কিভাবে অর্থ উপার্জন করছি? অনেক ছেলেমেয়েই জানে না, তার বাবা কিভাবে টাকা আয় করে। পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। নৈতিক চর্চা যারা করে তাদের বিপথে যেতে পারে না।
পরিচিতি: মনোবিদ
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ