অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধিতে মালিকপক্ষ বিরোধিতা করলেও ভেতরে চলছে বরণের প্রস্তুতি
জাফর আহমদ : তৈরি পোশাক শিল্পে অ্যাকর্ড-এর মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে মালিকদের বিরোধিতার মধ্যেই ভেতরে ভেতরে চলছে বরণের প্রস্তুতি। নিজেরাই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এমন বড় গার্মেন্টস কারখানার মালিকরা অ্যাকর্ডের দ্বিতীয় মেয়াদে কাজ শুরুতে আপত্তি দেখছে না। অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠন মনে করছে অ্যাকর্ড শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করছে, মেয়াদ বৃদ্ধি করলে ক্ষতি নেই। যদিও তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে অ্যাকর্ড একক সিদ্ধান্তে মেয়াদ বৃদ্ধি করছে, এটা মানবো না। বিজিএমইএ-এর অভিযোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যাকর্ড এককভাবে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে একদিকে ওই সব কারখানা বন্ধ হয়েছে, অন্যদিকে শ্রমিক বেকার হয়েছে। এক্ষেত্রে মালিকদের অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না। বিদেশি ব্র্যান্ড ও শ্রমিক সংগঠনগুলো অ্যাকর্ড সৃষ্টিতে চুক্তি যে স্বাক্ষর করেছিল, সেখানে মালিক পক্ষের উপস্থিত উপেক্ষিত ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু করতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেখানেও মালিক পক্ষ নেই। এটা মালিকরা অসম্মানের মনে করছে। মালিকরা ‘সম্মান’ চায়।
এ ব্যাপারে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন ‘রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল-আরসিসির অধীনে কাজ করতে হবে, অন্য কোনোভাবে এদেশে থাকতে পারবে না।’ অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ খুশি নন।
অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধিতে আপত্তি নেই তৈরি পোশাক খাতের বড় বড় মালিকদের। তারা নিজেরাই তৈরি পোশাক কারখানার যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এখন তারা তৈরি পোশাক বিক্রির কার্যাদেশ চায়। ত্রুটিপূর্ণ কারখানার কারণে দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ সংকটে পড়–ক তারা তা চায় না।
অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তায় কার্যক্রমে খুশি তৈরি পোশাক খাতের অধিকাংশ সংগঠন। তারা চায় ক্রেতারা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চত করুক।
এ ব্যাপারে ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, অ্যাকর্ড নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করলে আগের কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নতুন কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এতে শ্রমিকের সুবিধা হবে। মজুরি বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় কার্যাদেশ প্রদান এবং সর্বপরি শিল্পের উন্নয়নের শর্তে অ্যাকর্ড মেয়াদের বৃদ্ধিতে আপত্তি নেই। মূলধারা শ্রমিক সংগঠন বলে, পরিচিত গার্মেন্টস ঐক্যফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমিন এবং বিসিডব্লিউএমের সভাপতি বাবুল আক্তারসহ অন্যান্য শ্রমিক নেতারা।
এ ব্যাপারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলস-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, তৈরি পোশাক একটি আন্তর্জাতিক চেইন বিসনেস। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো চাইলে মালিক বা সরকার ইচ্ছা করলেই তা প্রত্যাখান করতে পারবে না। আবার অ্যাকর্ড গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে চাইলে মালিকদের বাদ দিয়ে হবে না। সরকারের দুই মন্ত্রী অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে যেভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছে, তা না করে অ্যাকর্ড, মালিক পক্ষ ও সরকার বিষয়টি নিয়ে বসতে পারে। রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাতে অ্যাকর্ড বাস্তবতা বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ