প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ, বাংলাদেশে নজির নেই আইনজীবীদের মত, ইচ্ছা থাকলে রিভিউতে অনেক কিছুই সম্ভব
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী ও এস এম নূর মোহাম্মদ : ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের এক্সপাঞ্জ করা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। তবে সকল আইনজীবীই একবাক্যে বলেছেন প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার কোনো নজির বাংলাদেশে নেই।
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, সরকার পক্ষ চাইলে রায়ের রিভিউ করতে পারে। আবার রিভিউ না করে দরখাস্তও করতে পারে। রিভিউ কিংবা দরখাস্ত করার পর কি হবে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন আপিল বিভাগ। অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেছেন, আমরা রায়ে যেসব আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক কথা রয়েছে সেগুলো বাতিল চাইব। আদালতের কাছে আবেদন করব। ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সরকার যদি মনে করেন, এই প্রধান বিচারপতির সময়ে এই আবেদনের শুনানি করবেন না। তাহলে সময় নিতে পারেন। আর সময় নিয়ে প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগামী ৩১ জানুয়ারির পরে শুনানি করতে পারেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আপিল বিভাগের দেওয়া কোনো রায়ের প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ হয়েছে বাংলাদেশে এমন কোনো নজির নেই। এমন নজির না থাকার কারণে এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা যাবে না এমন নয়। চাইলে এটা তারা করতে পারেন। তাছাড়া প্রধান বিচারপতি রায়ে যেসব প্রসঙ্গ অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য হিসেবে এনেছেন এর মধ্যে রয়েছে সংসদ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন নিয়ে। যে বিষয়গুলো অপ্রাসঙ্গিক সেই বিষয়ে বিচারের বিষয় ছিল না। তাই তিনি সরকারের আবেদন বিবেচনা করে এক্সপাঞ্জ করতে পারেন। তবে করবেন কিনা এটা একমাত্র তিনিই জানেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে এই রকম নজির না থাকলেও পাকিস্তানে প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেছেন সামরিক আইন জারির মামলার রায়ে।
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। রায়ের অনেক বিষয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। এই আপত্তির জায়গাগুলোতে আপত্তি জানানো হবে এবং ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য আমরা আপিল বিভাগের কাছে আবেদন করব।
কেবল দরখাস্ত করলে কি সেটি আইনের মধ্যে পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পড়বে। পুরো রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন না করলে আদালত এটা শুনবেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি রিভিউ করব কিনা? এখনো পর্যন্ত জানি যে আমরা দরখাস্ত করতে পারি। কবে নিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। তার সঙ্গে কথা বলার পর তিনি এই ব্যাপারে জানাবেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব ও আলোচনা করব।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ আমরা নেব। তবে আদালতের রায়ের বক্তব্য কীভাবে সরকার বাদ দিতে পারে সে বিষয়ে বলেননি। তিনি বলেন, রায়ে সংক্ষুব্ধ হলেও রিভিউ আবেদন করার বিষয়ে সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা নিশ্চয়ই চিন্তা-ভাবনা করছি যে এই রায়ের রিভিউ করা হবে কিনা। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। কারণ রায়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখনো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রায়ে অনেকে সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু এটা প্রকাশ করার একটা পন্থা রয়েছে। সেটা হলো তারা এ ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করতে পারেন। কিন্তু সেটা না করে যেভাবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সরকার চাইলে এখন রিভিউ করতে পারবে। সেখানে তারা কি চাইবেন সেটা তাদের বিষয়। তবে তারা বলার চেষ্টা করছেন কিছু আপত্তিকর শব্দ আছে যা তারা প্রত্যাহার চাইবেন। সেটা চাইতে পারবেন। রিভিউ দায়েরের পর বলা যাবে তারা কি চাইছেন। আর আদালত চাইলে সেটা প্রত্যাহার করতে পারেন। সেই ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ দায়েরের সুযোগ রয়েছে। এখন তারা কিভাবে চাইবেন সেটা তাদের বিষয়। এছাড়া জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, এখন রিভিউ দায়েরের সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে আইনগত কোনো সুযোগ নেই। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত