রায় নিয়ে কোনো পক্ষেরই অবস্থান নেওয়া উচিত না বিচার বিভাগ নষ্ট হয়ে গেলে রাজনীতি হুমকির মধ্যে পড়বে
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের অভিমত
এস এম নূর মোহাম্মদ : ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সারাদেশে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ রায় নিয়ে কথা বলছেন। তবে বিএনপি সমর্থিতরা রায়কে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দিলেও বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সরকার সমর্থিতরা। রায় নিয়ে কোনো পক্ষেরই কোনো অবস্থান নেওয়া ঠিক না বলে মত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। এতে করে রাজনীতিই হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন আইনজীবীরা। আর এর আগে রায় নিয়ে রাজনীতি না করতে সবার প্রতিই আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। রায় নিয়ে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, দুই দলের কর্মসূচি অগ্রহণযোগ্য। রায় নিয়ে পাল্টাপাল্টি করার সুযোগ নেই। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে রিভিউ করবে। আর অপর পক্ষেরও উৎসাহিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ রায়ে বিএনপি-এরশাদের আমল নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের কারণে বার বার মার্শাল ল’ আসে। বিশেষ করে উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে কোনোভাবেই কোনো অবস্থান নেওয়া উচিত না। সংক্ষুব্ধ পক্ষই হোক বা যারা মনে করছে জিতেছে। আদালত না থাকলে কেউ থাকবে না। আদালত রক্ষা করার দায়িত্ব সবারই। সবাই মিলে আদালত ধ্বংস করে দিলে বাংলাদেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার দিকে তারা এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর পরিণতি হবে ভয়াবহ বলেও সতর্ক করেন এই আইনজীবী।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রায় নিয়ে রাজনীতি না করা ভালো। রাজনীতিবিদরাইতো দেশ চালান। সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে রাজনীতি করলে তাদের ওপরই এর প্রভাব পড়বে। সেটার কারণে রাজনীতিবিদদেরই ক্ষতি হচ্ছে। এটা বিচার বিভাগের জন্য পরোক্ষ হুমকি। আর খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যক্ষ হুমকি বলে মনে করেন তিনি। সংসদের কাছে ক্ষমতা নেওয়ার বিষয়টিতে যে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, সেটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে। আর সেটা এতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে যে, তখন বুঝতে পারিনি।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, যে ভাষায় রায়ের সমালোচনা হচ্ছে সেটা অশোভন, আরও সংযত মন্তব্য আশা উচিত। বিচার বিভাগের সমালোচনা হতে পারবে না, সেটা প্রধান বিচারপতিও বলেননি। কিন্তু তাই বলে ব্যক্তিগতভাবে বিষোদগার করা, কথা বলা, পুরো বিচার বিভাগের জন্য হুমকি। এটা অবশ্যই চাপ প্রয়োগের এক ধরনের অপকৌশল বলে মনে করেন তিনি। এর আগে ত্রয়োদশ সংশোধনীর সময় বিএনপি যে ধরনের আচরণ করেছিল, এখন সে আচরণ আওয়ামী লীগ করছে। এটা অনাকাক্সিক্ষত এবং হওয়া উচিত না, বিচার বিভাগের জন্য ঠিক না। বিচার বিভাগ নষ্ট হয়ে গেলে কেউ রাজনীতি করতে পারবেন না। রাজনীতিও হুমকির মধ্যে পড়বে।
এছাড়া খুরশিদ আলম খান বলেন, রায় নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। শুধুমাত্র একটা ইস্যু তৈরি করার জন্য করা হচ্ছে এটা। এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া ঠিক না। তবে বিচার বিভাগ কারও কাছে মাথা নত করেনি করবেও না বলেও উল্লেখ করেন এই আইনজীবী। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি