আত্মার পরিশুদ্ধি
কাউসার মাহমুদ
দিন বদলের স্লোগান নিয়ে এগুচ্ছে মানুষ। মানুষের চিন্তা চৈতন্যের সব’টা জুড়ে এখন একটাই স্লোগান। দিন বদল কর। করতে হবে। তাহলেই আসবে পরম আরাধ্য সুখ। আসবে শান্তি। ঘুচে যাবে সকল অন্যায় -অবিচার। মিটে যাবে সকল সমস্যা। আসলেই কি তাই?শুধুমাএ দিন বদলের স্লোগান’ই কি পাল্টে দেবে সব? এতসকল হাজারো সমস্যা! অনিয়ম অশৃঙ্খলের জোয়ার সমাজে। ভাটা পরেনা কখনোই। বাড়ছেতো বাড়ছেই। আজ এটা, কাল ওটা। সামাজিক অবক্ষয়ের হিসেব আর কতোটা করা যায়। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে এমন অনেক ঘটনা আছে। যা প্রকাশ করতে মাথা লজ্জায় নুয়ে আসে। লিখতে গেলে কলম কাঁপে। অনুভবে আনলে চিন্তা বিভ্রাট হয়। সবশেষে বেরিয়ে আসে একদলা থুথু। সমাজের কোথায় দাড়িয়েছি আমরা? সভ্যতার কোন প্লাটফর্মে আমাদের অবস্থান। আমরা কি আদৌ সামাজিক? এটা নির্ণয় করবে কে? দিনশেষে খাতা কলমে আমরাই নির্নয় করি। উচু গলায় খুব জোড় দিয়ে বলি ‘আমরাই সামাজিক’ চলা ফেরায় স্মার্টনেস আর শুদ্ধ ভাষার বুলি আওড়িয়ে আমরা ভদ্রলোক সাজি। ‘দিন বদলের স্লোগান’ নিয়ে এগুই। লিফলেট, পোষ্টার, আর ব্যানারে রাঙিয়ে তুলি শহরের দেয়াল। গলি, কলোনি আর রাজপথ রুদ্ধ করে দিন বদলের মঞ্চ সাজাই। ভাষণের পর ভাষণ। কথার পিঠে কথা। বক্তৃতা, আলোচনায় কেঁপে ওঠে রাস্তার সদর দরজা। প্রকম্পিত করি পথ-ঘাট। আলোর মশাল নিয়ে ঘরে ফিরি। এতেই কি দিন বদল হয়! বা, হচ্ছে কি? সুস্থ শুদ্ধ শিক্ষা দিল’কে প্রশান্তি দেয়। অথচ আমাদের হৃদয়’টা বড্ড কালো। ঠিক যেন তমশায় ঘেরা। আমরা দিল দিয়ে শিক্ষা’কে অনুভব করিনা। করতে চাইনা। অথচ: এটাই হওয়ার ছিলো। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে আমরা দিল’কে পরিবর্তন করবো। সত্য-সঠিকের বিভারশ্নি দিয়ে আতœাকে করবো নির্মল। শুধু মাএ ‘দিন বদলের স্লোগান নয়’ দিল বদলের প্রত্যয় গ্রহণ করে যদি আমরা দিন বদলের চেষ্টা করি। তাহলেই হয়তো দূর হবে এ সামাজিক অবক্ষয়, নোংরামি ও কলুষতা। দূর হবে যুলুম, অত্যাচার। আমরা দেখি। আমরা বুঝি। প্রত্যেকটা মানুষ যদি তার নিজ জায়গা থেকে সংশোধন হয়। দিল,আতœা, মনকে পরিশোধীত করে। আর তার মাঝেও এ প্রয়াস থাকে যে আমি সত্য-সুন্দরের পথে চলবো। তাহলে সে অবশ্যই কখনো অসত্য -অসুন্দর, নির্যাতন -নিপীড়নের পথ বেছে নেবেনা। মানুষের ‘দিল বদল’ই তাকে দিন বদলের প্রয়াস দিবে। সুতরাং ‘দিন বদলের’ সাথে সাথে অবশ্যই আগে আমাদের ‘দিল’কে পরিবর্তন করতে হবে। পরিশুদ্ধ করতে হবে। সুন্দর একটা অন্তর নিয়েই আমাকে ‘দিন বদল’ এ স্লোগানের সামনে থাকতে হবে। আর এ দিল পরিবর্তনের ব্যাপারেই পৃথিবীর চিরকালের আধুনিক সামাজিক মানুষ, পেয়ারে হাবীব রাসুল সা. বলেছেন, জেনে রাখো! শরীরের ভেতর একটা মাংসপি- আছে। যখন ওটা পরিশুদ্ধ হয়ে যায় তখন পুরো শরীর পরিশুদ্ধ -সুস্থ হয়ে যায়। আর যখন ওটা নষ্ট ও আক্রান্ত হয় তখন পুরো শরীর আক্রান্ত হয়। হ্যা! জেনে রেখো! সেটা হলো (ক্বলব) দিল। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড,পৃষ্ঠা ১৩, হাদীস নং: ৫২, ঈমান পরিচ্ছদ: ৩৮ নং অধ্যায়) উল্লেখিত রাসূলের (সা.) এ হাদীসে আমরা দেখতে পাচ্ছি তিনি স্পষ্ট ভাবে অন্তরের পরিশোধনের কথা বলছেন। যে, যদি সে মাংসপি- তথা দিল’টা সুস্থ থাকে তখন তার পুরো শরীর সুস্থ থাকে। অর্থাৎ দিলের এ শুদ্ধ পরিবর্তন’টাই হলো মূল। প্রত্যেকটা মনুষ্য সত্বা যদি তার অন্তরের (দিলের) কলুষিত ভাব দুর করে ফেলে। তাহলে অবশ্যই অবশ্যই তার ভেতর বাহির পরিস্কার হয়ে যাবে। এবং তার থেকে কোন ভাবেই অশুভ, অশুদ্ধ, অসুন্দর, যুলুম নির্যাতন, অসামাজিকতা প্রকাশ পাবে না। পক্ষান্তরে বাহ্যতঃ মানুষ যতই ভদ্রতা আর সুশীলতার গিলাফ গায়ে জড়াক না কেন! যদি তার ভেতর তথা ‘দিল’ সাফ না থাকে। তাহলে অবশ্যই তার কাছ থেকে যে কোন ধরনের ন্যাক্কারজনক ও পাপ কার্যাদি প্রকাশ পেতে পারে। অতএব! আমাদের লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী উচ্চতর আইন বিভাগ, ইকরা বাংলাদেশ।