বিনোদনকেন্দ্রগুলো নগরবাসীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত
তরিকুল ইসলাম সুমন : আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো নগরবাসীকে নির্মল আনন্দ দিতে নতুনভাবে সেজেছে। শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। ঢাকার অদূরে প্রধান দুই থিম পার্ক ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দনসহ দিয়াবাড়ি থিম পার্কও অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের সঙ্গে নগরবাসীকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে নগরীর এ বিনোদনকেন্দ্রগুলো।
ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদের কিছুদিন আগেই চিড়িয়াখানায় বেশ কিছু নতুন অতিথি এসেছে। যা দর্শনার্থীদের বিনোদনে বাড়তি সংযোজন। ঈদ উপলক্ষে চিড়িয়াখানার জীবজন্তুর খাঁচাসহ পুরো চিড়িয়াখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বসানো হয়েছে ২০টি সিসি ক্যামেরা। সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা রক্ষীরা।
তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য বিভিন্ন বিষয়ে ১৩টি কমিটি করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন দিক দেখবেন। ঈদের দিন সকাল ৮টায় চিড়িয়াখানার গেট খুলে দেওয়া হবে। প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। তবে তিনি আশা করছেন,এদিন বিকালে কিছুটা কম দর্শনার্থী এলেও পরের দিনগুলোতে প্রায় ১ লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করবেন।
তিনি আরও বলে, গত এক মাসে চিড়িয়াখানায় জন্ম নিয়েছে ১৫টির উপরে প্রাণী। এর মধ্যে জলহস্তিÍ, কিডনিল্যান্ড, ইম্পালা, জিরাফ, গয়াল চিত্রা হরিণসহ আরো বেশ কিছু প্রাণী রয়েছে।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ জানান, ঈদের পরদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। অন্যদিনগুলোতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যালারি ঘুরে দেখা যাবে। ঈদে শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনা টিকিটে জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ থাকবে বলেও জানান তিনি। ছোট্ট সোনামণিদের আনন্দঘন সময় কাটানোর জন্য শহরের প্রাণকেন্দ্র রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্ককে নতুন সাজে সাজিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পার্কের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, ঈদ উপলক্ষে সবগুলো রাইড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা হয়েছে। রং উঠে যাওয়া রাইডগুলোতে নতুন রং করা হয়েছে। পুরো পার্কজুড়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুপার্কে বর্তমানে ১১টি রাইড রয়েছে। ঈদের প্রথম ৪ দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকবে। প্রবেশমূল্য ১৫ টাকা। প্রতিটি রাইড চড়ার জন্য দিতে হবে ১০ টাকা করে।
ঢাকার আশুলিয়ায় গড়ে উঠেছে আধুনিক এ বিনোদন কেন্দ্র। কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্টের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড পিআর মাহফুজুর রহমান টুটুল জানান, ঈদের প্রথম ৭ দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ফ্যান্টাসি কিংডম ও ওয়াটার কিংডম। ফ্যান্টাসি পার্কে বড়দের প্রবেশমূল্য ৪শ টাকা। ছোটদের সাড়ে ৩শ টাকা। ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশসহ ৮শ টাকার টিকিটে ওয়াটার কিংডমে সাঁতারও কাটা যাবে এবং একই সঙ্গে ওয়েভপুল, লেজি রিভার, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইডে চড়া যাবে। ফ্যান্টাসি কিংডমের ভেতরেই রয়েছে হেরিটেজ পার্ক। এখানে দেখা যাবে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা। রেপ্লিকা ধরনের হলেও নিদর্শনগুলো দেখে দর্শনার্থীদের ভাল লাগবে বলে টুটুল জানান। পাশাপাশি চড়া যাবে জায়ান্ট ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, কফি কাপ, ব্যাটারি কার, ফ্যামিলি ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইডে।
নবীনগরের বারুইপাড়ায় অবস্থিত নন্দন পার্ক কর্তৃপক্ষ ও সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পার্কের হেড অব মার্কেটিং মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন প্রিন্স জানান, ঈদের দিন সকাল থেকেই খোলা থাকবে পার্ক। সাধারণ প্রবেশ মূল্য ২৯৫ টাকা। সব রাইড উপভোগ করতে লাগবে জনপ্রতি (খাবারসহ) ৮৯৫ টাকার মতো। খাবার ছাড়া জনপ্রতি ৬৯৫ টাকা। ঈদের বিশেষ প্যাকেজও রয়েছে।
এসবের বাইরে ছোট-বড় আরও বহু বিনোদন কেন্দ্রে ঈদ উদযাপনে নগরবাসীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন রেখেছে। এরমধ্যে চলচ্চিত্র ও নাটক রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে দেশব্যাপী ‘নবাব’ ও ‘বস-২’সহ বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজাসহ বিভিন্ন খোলামেলা জায়গায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবেন সাধারণ মানুষ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ