পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চাপ বাড়লেও সক্ষমতা ও সেবার মানে পিছিয়ে মংলা বন্দর
মোনা হক : কনটেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চাপ বাড়লেও সক্ষমতা ও সেবার মানে এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে মংলা বন্দর। যন্ত্রপাতি স্বল্পতার কারণে বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর প্রক্রিয়ায় প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন হচ্ছে না। এর সঙ্গে রয়েছে জাহাজ থেকে গাড়ি খালাসের সময় স্টিকার ও খুচরা যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ার অভিযোগ। তবে আশার কথা হলো, এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমিয়ে সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বণিক বার্তা
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কনটেইনারে করে আমদানিকৃত পণ্য পরীক্ষার জন্য বন্দরে একটি কনটেইনার স্ক্যানিং মেশিন সংযোজন করা হচ্ছে। এটি চালু হলে কনটেইনার না খুলেই এর ভেতর কী ধরনের পণ্য রয়েছে, তা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। এতে সময় সাশ্রয় হবে, কমবে কায়িক পরীক্ষার নামে হয়রানি।
মংলা বন্দর দিয়ে প্রধানত রিকন্ডিশনড গাড়ি, সার, গম, কয়লা, এলপি গ্যাস, সিমেন্টের ক্লিংকার, লাইমস্টোন, জিপসাম, স্টিলপ্লেট, বোল্ডার, স্ল্যাগ, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ, সুপারি ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসামগ্রী আমদানি করা হয়। বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে মংলায় কনটেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চাপ অনেক বেড়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) বন্দরে ৬২৩টি বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে মোট ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৭২৭ টন পণ্য হ্যান্ডল করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ আসে ৪৮২টি। আর পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪২১ টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাহাজের সংখ্যা ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪১৬টি ও ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ২৭৯ টন। ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুসারে পাঁচ বছরে মংলা বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিং দ্বিগুণ বেড়েছে।
পণ্য ওঠানো-নামানোয় পরিমাণগত এ প্রবৃদ্ধি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক একটি খবর। কিন্তু সক্ষমতার প্রশ্নে মংলা বন্দর এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছতে ব্যর্থ। জাহাজ থেকে পণ্য লোড-আনলোডের জন্য বন্দরের জেটিতে ক্রেন রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে আটটিই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
ফলে বর্তমানে পাঁচটি ক্রেন দিয়ে কোন মতে কাজ চালাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বন্দরের ৫৩টি যন্ত্রপাতির মধ্যে ২৬টিই বিকল। সচল রয়েছে ২৭টি। বিকল যন্ত্রপাতির মধ্যে ক্রেন ছাড়াও রয়েছে দুটি স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, ১০টি ফর্ক লিফট ও ছয়টি টার্মিনাল ট্রাক্টর। বন্দরে পণ্য লোড-আনলোডের জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দরে এখন পাঁচটি জেটিতে কাজ হচ্ছে। এগুলোয় চারটি ট্রানজিট শেড, দুটি ওয়্যারহাউজ, তিনটি কনটেইনার ইয়ার্ড ও দুটি কার পার্কিং ইয়ার্ড রয়েছে। আমদানি-রফতানির গতি বাড়াতে বন্দরে সংযোজন করা হচ্ছে আধুনিক সরঞ্জামাদি। নতুন ৩০টি ক্রেনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনে বন্দরে সংযোজন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন আধুনিক সরঞ্জামাদির অভাবে মংলা বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং গতি পাচ্ছিল না বলেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।