এই ‘নাজির’রা কেন রাজনীতি করে!
রবিউল আলম
পৃথিবীতে মানুষ আসা যাওয়ার মাঝে সৃষ্টি লক্ষ্যে, বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু কর্ম করে। সৃষ্টির লক্ষ্যে আবিষ্কার, ইতিহাসের জন্য শিক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ বেঁচে থাকার অবলম্বন খোঁজে। কেন মানুষ রাজনীতি করে তা ৪৫ বছর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে এবং ৩৬ বছর পদে থেকেও এর উত্তর পেলাম না। কিসের নেশায় মানুষ পাগলের মতো উন্মাদ হয়ে ছুটে একটি কথা শোনার জন্য শেখ হাসিনা আজকে কি বলে। দলের কর্মসূচি আজকে কি হবে, কিভাবে পালন করতে হবে। আমার অবাক লাগে, যে সকল মানুষগুলো শেখ হাসিনাকে দেখতে সকাল থেকে উন্মুক্ত হয়ে থাকে ৪টায় নেত্রীর সভা অনুষ্ঠিত হবে, ১২টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সভা হলে কিছুটা রক্ষা, কারণ পরিবেশটা অনেক সুন্দর, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া কঠিন কিছু নয়। তিন-চার ঘণ্টা কাটানোর জন্য লজেন্স, বিস্কুট কিছু না কিছু সঙ্গে নেওয়া যায়। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সম্মেলন কেন্দ্রের অনুষ্ঠান হলে কষ্টের শেষ নেই। যত লোকের সমাগম হয় তার অর্ধেক লোকও প্রবেশ করতে পারে না। নেত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্নে কর্মীরা সকল কিছু ত্যাগ করতে কার্পণ্য করেন না। কিন্তু ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থাকতে হয় এবং যাতায়াতে আরও দুই ঘণ্টা সময় লাগে, মানুষ বলে কথা। একটু পানি খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে না, একটি বিস্কুটের প্যাকেটও নিতে দেওয়া হয় না এবং আয়োজকগণও কোনো ব্যবস্থা করে দেন না। তারপরও ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে একনজর নেত্রীকে দেখার জন্য, একটি কথা শোনার জন্য যারা এই দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদেরকে কন্ট্রাক্টরি, ইজারাদার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, এমপি, মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোনো কাউন্সিলর, কন্ট্রাক্টর, গরু হাটের ইজারাদার, সাপ্লায়ার, মাদক স¤্রাট, স্বার্থবাজদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায় না।
অতি সাধারণ দলীয় কর্মীরা রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের পরেও নেত্রীকে দেখার ইচ্ছা বাঁচিয়ে রাখে, একটু পানির ব্যবস্থা কি করা যায় নাÑ এই মানুষগুলোর জন্য। এই মানুষগুলো শেখ হাসিনা, শেখ মুজিব পাগল। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, কারও ঘরে ভাত নেই, কারও ঘরে বাজার নেই, কেউ ছেলেমেয়ের স্কুলের বেতন দিতে পারে না, চিকিৎসার জন্য টাকা নেই, চাঁদাবাজি করতে শিখেনি, করার মতো বুদ্ধি ও শক্তি নেই। মিছিল হলে গুলি ও টিয়ার গ্যাসের ভয় নেই। তবুও ওরা রাজনীতি করে। কেন ওরা রাজনীতি করে আমার জানা নেই। অনেক উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি, উত্তর পাইনি। আমার ওয়ার্ড ৩৪নং এর নাজির, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে দেখছি মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, কিসের ঘর কিসের সংসার, একটিও মিস করেন না। লাঠি, বৈঠা, ব্যানার, ফেস্টুন টানতে পারদর্শী, কখনো না করবে না। যদি কখনো আমরা না করেছি, তোমার শরীর ভাল না, আজ তোমাকে যেতে হবে না। নাজিরের রাগের অভাব হয় না। নাজির যাবেই, অনেক সময় পালিয়েও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে। আজ এই পৃথিবীতে সে একা, সংসারকে অবজ্ঞা করায় আজ তার পাশে কেউ নেই, বিশাল অসুখে ভুগছেন, অপারেশন করাতে হবে। আলহাজ মো. সাদেক খান, থানার নেতা নজরুল ইসলাম টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অপারেশন হলে সঙ্গে একজন লোক থাকতে হবে, সেজন্য ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আমি ভাবছি এই নাজিরদের সংখ্যা কত, কেন এই নাজিররা রাজনীতি করে এবং করছে। আবার ভাবি এই নাজিরদের জন্য রাজনীতি ও দল টিকে আছে, আমাদের নাজির ভাগ্যবান যে তার জন্য সাদেক খান আছে। গরুর হাটের ইজারাদাররা কি আর নাজিরকে খুঁজবে, না নাজিরদের প্রয়োজন আছে। চাটার দল চাটুকারি করবে। জি, জি করে নিজের আখের গোছাবে। সকল নাজিরদের বোঝা শেখ হাসিনাকে একাই বইতে হবে। তবু নাজিররা রাজনীতি করবেই। কমিটি করার সময় নাজিরদের পদের প্রয়োজন হয় না, পদের প্রয়োজন হয় বিএমডব্লিউ গাড়িওয়ালাদের। হায়রে রাজনীতি, তবুও নাজিররা রাজনীতি করে, শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিব পাগলের অভাব নেই বলে।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান