পাহাড়ে-জঙ্গলে কেটেছে রোহিঙ্গাদের ঈদ
ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার : কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার থাইংখালীর পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা আমিনা বেগম বলেন,এক সময় সংসার চালাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। আর এখন প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমাদের কি ঈদ বলতে কিছু আছে? স্বামী হারিয়ে পালিয়ে এসেছি। তিন দিন মুখে কিছু যায়নি। তবু স্বস্তি যে এদেশে আশ্রয় পেয়েছিÑ বলছিলেন। ঈদের দিন দুপুরে কথা হয় তার সঙ্গে। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা আরও কয়েক নারী। আমিনা জানান, মিয়ানমারের বলিবাজারে তার বাড়ি। স্বামী নুরুল আমিনকে সেদেশের সেনারা জবাই করেছে। এক মাত্র ছেলেকে নিয়ে তিনি জঙ্গলে পালিয়ে ছিলেন। দুদিন পর শনিবার বাংলাদেশে ঢুকেছেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমদ জানান, প্রতিদিনই হাজার হাজার রোহিঙ্গা আসছে। শনিবারও উখিয়া-সীমান্ত দিয়ে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।
সরেজমিন দেখা যায়, ঈদের দিন শনিবার নাফ নদের সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা আসছে। তাদের ঈদের দিনটা কেটেছে বনে-জঙ্গলে। ঈদ নিয়ে এসব মানুষের কোনো ভাবনা নেই। খুঁজছেন একটু আশ্রয়। উখিয়া টেংখালী পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ করিম আলী জানান, নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা অনেকে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের লেদায় আশ্রয় নিয়েছে।কিন্তু তিনি ওখানে জায়গা না পেয়ে পরিবারের ৮ সদস্যকে নিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অচেনা একব্যক্তি তাদের ঝুঁপড়ি তৈরি করতে বাঁশ ও একটি বড় পলিথিন দিয়েছেন। তাকে তিনি চেনেন না।
করিম আলী জানান, পরিবারের সবাই না খেয়ে আছেন তিন দিন। আয়েশা নামের এক রোহিঙ্গা নারীও বলেন একইভাবে আশ্রয় নেওয়ার কথা। তিনি তিন দিন মিয়ানমারের পাহাড়ে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশে ঢোকার পর অচেনা এক লোক তাকে কলা-বিস্কুট দিয়েছেন। এরপর আর কোনো খাবার মেলেনি।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের সদস্য আলমগীর ফরহাদ বলেন, পালংখালী পাহাড়ের ৫ কিলোমিটার এলাকায় লাখের মতো রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। এদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অনেকে গ্রামে গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে।
অনুপ্রবেশকারী নুর বানু ও ইয়াছমিন আক্তার বলেন, গতবছর ঈদে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছি। আর এবার নিজের ঘরবাড়ি আত্মীয় স্বজন ফেলে পালাতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা বলে আমাদের এ হাল।
এদিকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয়ের খোঁজে আসা দিলু মিয়া বলেন, মরতে মরতে প্রাণে বেঁচে এপারে এসেছি। অল্পের জন্য পরিবারের ৮ জন বেঁচে গেলাম।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শনিবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান