রোহিঙ্গা সংকট এবং বাংলাদেশ : জুনায়েদ সাকি
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলা চলছে এবং যেভাবে নারী-শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে এটা তো একটা গণহত্যা। এ গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার এবং এজন্য মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভূমিকা পালন করা উচিত। আমরা চাইব, সমস্ত আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ যাতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করে মিয়ানমার সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কেননা মিয়ানমারের এই গণহত্যার ফলে বাংলাদেশকে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এখানে শরণার্থীরা বাংলাদেশে আসতেছে বা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটা অংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তাদের উপর হামলার ফলে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া আছে এবং এগুলো ব্যবহার করে অনেকেই অনেক রকম অপতৎপরতায় লিপ্ত আছে। ফলে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্য তাদের যথাযথ জীবনের জন্য এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার এবং এর ফলে যে শরণার্থীর আগমন পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে যদি কোনো নেতিবাচক দিক ঠেকাতে হয় এবং রোহিঙ্গাদের জন্য যদি আমাদের কোনো ভূমিকা পালন করতে হয়, এজন্য অবশ্যই আন্তর্জাতিক মহলে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
আর বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে এই রোহিঙ্গাদের যারা সীমান্তে এসে আশ্রয়ের প্রার্থনা করছে, তাদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সেখানে তাদেরকে যথার্থভাবে নামের তালিকা তৈরি করে তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলে, তাদেরকে যথার্থভাবে তালিকাভুক্ত করতে হবে। ঢুকতে দেব না বলে তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হবে একটা নিষ্ঠুরতা। অন্যদিকে এভাবে আইনগতভাবে ঢুকতে না দিলেও নানানভাবে বাংলাদেশে কিন্তু তারা ঢুকে যাচ্ছে। এবং এই যে ঢুকে যাচ্ছে অর্থাৎ আইনি নিষেদ্ধাজ্ঞার বাইরে ঢুকে যাচ্ছে তারা কিন্তু একটা তালিকাভুক্ত আর কোনো শরণার্থী থাকবে না। এবং তারা এখানে খুবই নাজুক, তারা কিন্তু খুব সহজেই একটা অপরাধী গোষ্ঠীর শিকারে পরিণত হচ্ছে। যার কোনো লিগ্যাল রাইটস নেই, তারা কিন্তু যেকোনো গ্রুপের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ তাদেরকে দিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো কাজ করাতে পারে। এর ফলে আমাদের সরকারের যে নীতি সীমান্তে ঢুকতে না দেওয়া, এটার জন্য অত্যন্ত নিষ্ঠুর একটা নীতি, এটা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার এবং তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা দরকার। তাদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। দুই হচ্ছে, সরকার ঢুকতে দিবে না বলছে, আবার তারা ঢুকে পড়ছে। এই ঢুকে পড়ছে যে শরণার্থী কোনো তালিকাভুক্ত না হয়ে, তাদের পরিচয় এবং তাদের যে শরণার্থী হিসেবে থাকাটা একটা আইনি বৈধতা ছাড়াই থাকছে। ফলে তারা বিভিন্ন অপরাধী গোষ্ঠী হিসেবে দ্রুত শিকারে পরিণত হচ্ছে। এবং তাদেরকে ব্যবহার করা শুরু হয়ে গেছে। দেশকে যদি বিভিন্ন অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে হয়, তাহলে সরকারকে অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগের আশ্রয় কেন্দ্র খুলে তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। জাতিসংঘসহ সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থাকে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমারকে এই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া, সেখানে তাদের নিরাপদ জীবনের জন্য নিশ্চয়তা দরকার।
এ সংকট নিরসনে সমস্ত আন্তর্জাতিক পক্ষকেই এখানে জড়িত করা দরকার। বাংলাদেশ’র সমস্ত সংস্থা বা পক্ষকে আন্তর্জাতিক ফোরামে এই গণহত্যার বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়া দরকার। বাংলাদেশকে অন্তত এ সংকট নিরসনে নাড়া দেওয়া দরকার। আর এটা তো ন্যূনতম মানবিক দায়িত্ব।
পরিচিতি: প্রধান সমন্বয়ক, গণসংহতি আন্দোলন
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ