রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর অবস্থান : ড. দেলোয়ার হোসেন
মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী যখন রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালায় এবং সেখানে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তখনই এ বিষয়টির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।
কিন্তু সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সমস্যাটি অনেক পুরনো। আমরা লক্ষ্য করেছি, সমস্যাটি পুরোনো হলেও জনগোষ্ঠীর এ সমস্যাটিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিংবা সমস্যাটিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বা আঞ্চলিক পর্যায়ে একেবারই বিবেচনা দেওয়া হয়নি। যার ফলে বিষয়টি আস্তে আস্তে এবং আজকে বহুমাত্রিক রূপ লাভ করেছে। বিশেষ করে গত বছরের অক্টোবর এবং এ বছরের মাঝামাঝিতে দুটি সশস্ত্র আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি এই সশস্ত্র আক্রমণের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অনেক বেশি নিরাপত্তার ইস্যু হিসেবে মিয়ানমার দেখানোর চেষ্টা করছে।
ইতোমধ্যে আমরা দেখছি, এই ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল প্রথমবারের মতো কিছুটা হলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দিকে আগ্রহ বা এটেনশন দিচ্ছে। যদিও তাদের যতটুকু এটেনশন দেওয়ার প্রয়োজন সেটা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে খুবই অপ্রতুল। তাদের এই এটেশনটা একেবারই যথেষ্ট না। রাখাইনের সমস্যা সমাধানের জায়গা থেকে এটা তেমন ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয় না। তবে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের মাত্রা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
মিয়ানমারে অং সান সু চির নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক সরকার পরিচালিত হচ্ছে। তারপরও আমরা দেখছি যে রাখাইনে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা এবং সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে। যদিও তাদের এ দাবির সত্যতা আছে। কারণ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা মিয়ানমার সরকার অনেক আগে থেকেই করে আসছে। এখন তারা এটি অনেকটা সফলভাবে কার্যকর করতে পারছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সুরক্ষা বাড়ালেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কিন্তু অব্যাহত রয়েছে। এমনকি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসেছে।
এতে বোঝা যায় দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর কী পরিমাণ অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। এবং নির্যাতনের মাত্রাটা কতটা তীব্র হলে একটি জনগোষ্ঠী শত বাধা উপেক্ষা করে অন্য দেশে আশ্রয়ের পথ খোঁজে? যার ফলে মুসলিম রোহিঙ্গারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে।
এ সমস্যাটি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে কিন্তু সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তব কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আঞ্চলিক শক্তিশালী যে পক্ষগুলো আছে তারাও কিন্তু মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। বরং এই শক্তিশালী পক্ষ মিয়ানমার সরকারের পাশেই আছে। কারণ, এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে কোনো ধরনের প্রস্তাব আনা হয়নি। অথচ একটি দেশ যুগের পর যুগ একটি জনগোষ্ঠীকে অমানসিক অত্যাচার এবং নির্যাতন চালাচ্ছে।
পরিচিতি: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসেন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ