রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক ফোরামে উচ্চকণ্ঠে উপস্থাপন করা দরকার
রাজেকুজ্জামান রতন : রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকটটি অনেক দীর্ঘদিনের। এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট হলেও তা বাংলাদেশকে বারবার আক্রান্ত করছে ও প্রভাবিত করছে। এ সংকট বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও একটা প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ শুধুমাত্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে এক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকতে পারে না। আবার এই সমস্যাটার সঙ্গে যেমন জাতিসংঘকে যুক্ত করার বিষয় আছে, ঠিক তেমনি পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াকেও সংযুক্ত করতে পারে। তাদের সঙ্গেও একটা পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনা চলতে পারে। কেননা, এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন নির্যাতিত হয়, তখন তারা যেমন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, ঠিক তেমনি কখনো কখনো মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতেও আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ফলে এই জনগোষ্ঠী নিয়ে মিয়ানমারের ভূমিকার ব্যাপারে একটা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করারও প্রয়োজন আছে। কারণ, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আজ যেটা করছে, সেটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। এটা জাতিসংঘ ঘোষিত সমস্ত অধিকার বা মানবাধিকারের পরিপন্থী।
কেননা, বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, সে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা ভীষণভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে। এ সমস্যাটা শুধুমাত্র বাংলাদেশের একক কোনো সমস্যা নয়। তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উচ্চকণ্ঠে উপস্থাপন করা উচিত। যাতে করে একটা জনগোষ্ঠীর এ রকম দুর্দশাকে কেন্দ্র করে আমরা যেন ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম না দেই। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালের পর থেকে রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করছে না। এক্ষেত্রে যত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি আছে, এগুলো যেন মিয়ানমারের উপর প্রয়োগ করা হয়। একটা জনগোষ্ঠীর মানুষ দেশটিতে শত বছর ধরে অবস্থান করার পরও তাদের নাগরিকত্ব থেকে বাদ দেওয়া, এটা যে কত বড় মানবিক বিপর্যয়, যা আন্তর্জাতিক ফোরামসহ যেখানেই সম্ভব সেখানেই উত্থাপন করা দরকার।
পাশাপাশি একটা জনগোষ্ঠী যখন মানবিক সমস্যায় পড়ে, তখন তাদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতেই হয়। রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে আমাদের দিকে আসছে আর আমরা তাদেরকে মিয়ানমারের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। আবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের দিকে। এতে করে তাদের অনেকেই ডুবে মারা যাচ্ছে নাফ নদীতে। আবার কখনো তারা দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে গুলি খেয়ে মারা যাচ্ছে এবং নির্যাতিত হচ্ছে। কখনো বা আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের দেশীয় মানুষদের হাতে। এটা যেন কখনো না হয়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা যেন এ রকমটা না করি। কেননা, আমাদের স্বাধীনতার সময় আমরা বুঝতে পেরেছি জাতিগোষ্ঠীর ওপর অপমান হলে সেটা কেমন লাগে?
ফলে পৃিথবীর যেকোনো জাতিগোষ্ঠী যদি নিপীড়িত এবং নির্যাতিত হয়, তখন তাদের পাশে দাঁড়ানোটাও আমাদের এক ধরনের নৈতিক কর্তব্য। সে কর্তব্যটাও আমাদের পালন করতে হবে। ফলে একইসঙ্গে তিনটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখা দরকার। প্রথমত, আমাদের দেশে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গা সমস্যাটা শুধুমাত্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে আঞ্চলিক ফোরামে আলোচনা এবং জাতিসংঘে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি উত্থাপন করা দরকার।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ